ডায়াবেটিস | হৃদরোগ: নতুন খাদ্য ব্যবস্থার রোগ :

 ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ: নতুন খাদ্য ব্যবস্থার রোগ :

ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ হলো মানুষ কিভাবে খায় এবং কাজ করে তার পরিবর্তনের দ্বারা সৃষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যা। যেখানে মানুষ এখনো তাদের নিজেদের খাবার নিজেরাই সংগ্রহ, উৎপাদন, এবং রান্না করে, এবং কৃষক বা কারিগর হিসেবে কাজ করে সেখানে এ রোগগুলো কদাচিত দেখা যায়। কিন্তু যেহেতু আরও বেশী করে মানুষ তাদের কাজ করার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, এবং খুবই সামান্য শরীরচর্চা (উদারহরণস্বরূপ, কারখানায় কাজ করা, বা একটি কম্পিউটারের সামনে কাজ করা) করতে পারছে এবং তারা আরও বেশী করে কারখানায় উৎপাদিত খাবারের উপর নির্ভর করছে, তাই এই রোগগুলো এখন সচরাচর দেখা যাচ্ছে। এগুলো কোন জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট নয়, এমনকি এগুলো ছোঁয়াচেও নয়।
এগুলো সক্রিয়তার অভাব, জঞ্জাল খাবারের উপর নির্ভরতা, বাড়তি মানসিক চাপ এবং আমাদের জীবনে অসমতার কারণে ঘটে থাকে। এই অবস্থাগুলোতে আমাদের দেহ ভালভাবে কাজ করতে পারে না।
ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ খুবই ভিন্ন দু’টি রোগ হলেও এগুলো হওয়ার পেছনে অনেক কারণগুলোই এক।
এই রোগগুলোর প্রতিটিই অন্যটি হওয়ার পিছনে কারণ হতে পারে, এবং এই রোগগুলোর প্রতিটির চিকিৎসা করা ও রোধ করার উপায়গুলোও একই।
ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস হলো এমনই একটি সমস্যা যা হলে দেহ খাবারে থাকা চিনি যথাযথভাবে প্রক্রিয়াজাত করতে পারে না। এর ফলে অন্ধত্ব, অঙ্গহানী, দীর্ঘস্থায়ী সংজ্ঞাহীনতা, বা এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
ডায়াবেটিস যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনী দেশগুলোতে সবথেকে সচরাচর দেখা যাওয়া রোগে পরিণত হয়েছে, এবং এটি সারা পৃথিবীতে এখন ধীরে ধীরে সচরাচর দেখতে পাওয়া রোগে পরিণত হচ্ছে। এর খাদ্য সংশ্লিষ্ট কারণগুলোর মধ্যে আছে অতিরিক্ত খাওয়া, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, এবং অনুশীলনের অভাব। যেখানেই কারখানায় তৈরী, সাদা আটা ও উচ্চমাত্রার চিনিযুক্ত খাবারের রাজত্ব সেখানেই ডায়াবেটিসের বসবাস।
হৃদরোগ ও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া

1.উচ্চ রক্ত চাপ
2.হৃদরোগ
3.হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া
এগুলো আসলে মাত্র একটি স্বাস্থ্য সমস্যা: হৃদরোগ-এর বিভিন্ন অংশ। অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং শরীর চর্চার অভাব (সাথে ধূমপান ও মানসিক চাপ) রক্ত নালীগুলোর মধ্যে চর্বি জমা হওয়ার কারণ ঘটায়। ফলে, এই পুরু হয়ে যাওয়া নালীগুলোর মধ্যে দিয়ে রক্ত প্রবাহিত করার জন্য হৃদপিণ্ডকে আরও বেশী জোরে রক্ত পাম্প করতে হয় যা উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করে। হৃদপিণ্ডটি এই সমস্ত খাটুনির পরে ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে যায়। যে রক্ত মুক্তভাবে প্রবাহিত হতে পারে না সেগুলো জমাট বেঁধে যায়, এবং হৃদপিণ্ডটি ক্লান্ত হয়ে ও রক্তের প্রবাহ না পেয়ে কাজ করা বন্ধ করে দেয়, যাকে আমরা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া বলি।
বাতজনিত হৃদরোগ হৃদরোগের আরও একটি সাধারণ কারণ। এটি শিশু অবস্থায় বাতজনিত জ্বর হবার কারণে ঘটে।
ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ রোধ এর চিকিৎসা হিসেবে খাদ্য:
প্রচুর পরিমাণে সতেজ সবজি, পূর্ণ দানা, এবং শিমের বীচি হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস রোধ ও চিকিৎসা করার জন্য সব থেকে ভাল।
লাল মাংস. দুগ্ধজাতীয় খাবার, এবং ডিম স্বাস্থ্যকর খাবার, কিন্তু যদি প্রতিবার খাবারের সময় বা এমনকি প্রতিদিনও খাওয়া হয় তবে এগুলো হৃদরোগ হবার সম্ভাবনাকে আরও এগিয়ে আনে। তাই এগুলোকে সপ্তাহে মাত্র কয়েকবার বা তার থেকে কম বার খাওয়া উচিত।
মিষ্টি ও প্রক্রিয়াজাত করা শ্বেতসার জাতীয় খাবারের কোন প্রয়োজনীয়তাই নেই, এবং এগুলোকে প্রতিদিন খেলে ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনাই বেশী।
অল্প পরিমাণে চর্বির প্রয়োজন কিন্তু যদি প্রচুর পরিমাণে খাওয়া হয় তবে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ উভয়ই হতে পারে। শেফ জাহেদ এর মতে লাল মাংস, পাম তেল, তেলে ডুবিয়ে ভাজা খাবার, এবং কারখানায় তৈরী খাবারগুলোই হলো চর্বির মূল অস্বাস্থ্যকর উৎস।
এগুলো কম করে খেতে চেষ্টা করুন। বাদাম, আভোকাডো, এবং মাছ হলো চর্বির স্বাস্থ্যকর উৎস এবং এগুলোতে অন্যান্য পুষ্টিউপাদানও থাকে, তাই এগুলো হলো সবথেকে ভাল পছন্দ।
লবন যদি বেশী পরিমাণে খাওয়া হয় তবে তা হৃদরোগের অবনতি ঘটাতে পারে। আপনার যদি হৃদরোগ বা উচ্চ রক্ত চাপ থাকে তবে নোনতা, মোড়কজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। কৌটাজাত খাবারে প্রায় সব সময়েই অতিরিক্ত লবন থাকবে। আপনার খাবারের যখন স্বাদযুক্ত করবেন তখন সামান্য লবনযুক্ত করুন, বা তার পরিবর্তে গুল্মলতা বা মশলা ব্যবহার করুন।
কোক এবং অন্যান্য বোতলজাত বা কৌটাজাত মিষ্টি পানীয় বিশেষ করে অস্বাস্থ্যকর। এগুলো মূলত শুধুমাত্র জল ও চিনির সংমিশ্রণ, ও রং ও স্বাদযুক্ত করার জন্য রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়। এগুলো প্রতিদিন পান করলে ডায়াবেটিসের সৃষ্টি করতে পারে বা এর অবনতি করতে পারে, দাঁতের ক্ষয় করতে পারে, এবং স্বাস্থ্যের জন্য ভাল না এমন কিছু দ্বারা আপনার পেট ভরিয়ে তোলে।
আপনি যদি মোটা হন: ওজন কমানো আপনাকে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ উভয় থেকেই রক্ষা করতে পারে। ধীরে ধীরে ওজন কমানো অল্প সময়ে অনেক বেশী ওজন কমানোর থেকে নিরাপদ।
সবথেকে নিরাপাদ, সবথেকে বেশী দীর্ঘস্থায়ীভাবে ওজন কমানোর উপায় হচ্ছে প্রায়ই শরীর চর্চা করা (সপ্তাহে পাঁচ দিন বা তারও বেশী) এবং শালীন আকারের খাবার খাওয়া। উপরে তালিকাকৃত খাবারগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।

আরও দীর্ঘ সময় ও ভালভাবে বেঁচে থাকার আর একটি উপায় হলো ধূমপান ছেড়ে দেয়া। ধূমপান ছেড়ে দেয়া আপনাকে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, এবং ক্যান্সার থেকেও রক্ষা করবে।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

dnt share any link

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম