পিজ্জা ,পাস্তা ,ইতালিয়ান খাবার

 পিজ্জা! পাস্তা ইতালিয়ান খাবার 

জিভে জল আনা লোভনীয় এসব খাবারের নাম এখনকার অনেকেরই পছন্দের তালিকার বেশ উপরের দিকেই রয়েছে। আমরা কি জানি আমাদের পছন্দের এসব প্রিয় খাবার কোন কোন দেশের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে? দেশভেদে রয়েছে ঐতিহ্য খাবারগুলোতে ভিন্নতা। সভ্যতার এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্ম পর্যন্ত ইতিহাস, সংস্কৃতির সাথে গাঢ়ভাবে সম্পৃক্ত এসব খাবারগুলোই নিজ নিজ দেশের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে যুগ যুগ ধরে।
নৈসর্গিক প্রকৃতি, সংস্কৃতি,ফ্যাশন প্রভৃতির সাথে সাথে চমৎকার রন্ধনশিল্পের কথা বললেই প্রথমেই যে দেশটির নাম ভাবনাতে আসে তা হল – ইতালি। একজন ভ্রমণপিপাসু মানুষ যতটা মুগ্ধ হবেন এর অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, অনন্য সংস্কৃতি দেখে ঠিক ততটাই চমৎকৃত হবেন দেশটির রন্ধনশিল্প সম্পর্কে জেনে।
এই ভূমধ্যসাগরীয় দেশটি একজন পর্যটককে অসংখ্য ঐতিহ্যবাহী এবং বিখ্যাত সব খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকে। ইতালিয়ান এসব ঐতিহ্যবাহী খাবারকে বাদ দিয়ে কখনও ইতালিয়ান ইতিহাস সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে জানা সম্ভব নয়। খুব সম্ভবত এগুলোই একমাত্র ইতালিয়ান ঐতিহ্য যা ইতালির বাইরের মানুষের কাছেও খুব পরিচিতি।

পাস্তা এবং পিজ্জা। এ-দুটোই বর্তমানে আমাদের খুব পরিচিত খাবার যা মূলত এসেছে ইতালি থেকে। শেফ জাহেদ এর মতে এগুলো ছাড়াও নানা পরির্বতনের মাধ্যমে অঞ্চলভেদে রয়েছে নানা স্বাদের খাবার।
ইতালির রন্ধনশিল্প মূলত কৃষিজ নির্ভর, যে কারণে এদের রান্নার জন্য খুব বেশি দামি উপকরণ ব্যবহার করতে হয় না। তাই বেশিরভাগ ইতালিয়ান রেসিপিগুলোতে চীজ, মোজারেলা, এগপ্ল্যান্ট, অলিভ অয়েল, অলিভ প্রভৃতি অধিক ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য দেশের সাথে ইতালিয়ানদের পার্থক্য হল, এরা রান্নার কৌশলগত দিকের চেয়ে রান্না উপকরণগুলোর গুণগত মান নিয়ে বেশি সচেতন থাকে। বিভিন্ন রকমের মজাদার ডেজার্ট আর সুরুচিকর খাবারগুলোকে ইতালিয়ানরা অত্যন্ত বিশুদ্ধভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধারণ করে চলেছে যেহেতু এগুলো তাদের ঐতিহ্যের নানা দিক প্রকাশ করে থাকে। চলুন আজ জেনে নিই ইতালির কিছু ঐতিহ্যবাহী খাবার।
পাস্তা (Pasta): ইতালির অঞ্চলভেদে রয়েছে বিভিন্ন স্বাদের পাস্তা। যেমন রোমে পাওয়া যাবে পাস্তা-লা-কার্বোনারা, যা তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ডিম, প্যাকোরিনো চীজ, গুয়ানচালে, ব্ল্যাকপিপার। আর যদি শহরটি হয় ভ্যাটিকানসিটি তাহলে মিলবে স্প্যাগিটি-লা-কার্বোনারা, স্প্যাগিটি-লা-গ্রিশিয়া যা বানাতে ব্যবহৃত হয় ডিম, চীজ, বেকন, পিপার, চিলি পিপার ইত্যাদি।
পিজ্জা (Pizza): পিজ্জা প্রিয় এমন কারো পিজ্জা শব্দটি শুনলেই যে পিজ্জাটির কথা মনে পড়বে তা হল- পিজ্জা মার্গ্যারিটা। নেপলস্ থেকে উদ্ভূত এই পিজ্জা দেখতে খুব সাধারণ হলেও স্বাদে একেবারেই অতুলনীয়। পাতলা, ক্রিস্পি এই পিজ্জার টপিং করতে সাধারণত ব্যবহার করা হয়-অলিভ অয়েল, রসুন, বেসিল, টমেটো, পারমেসান চীজ, মোজারেলা ইত্যাদি।
অ্যারানচিনি (Arancini): সোনালি বাদামি রঙের এই স্টাফড্ রাইস বল পাস্তা পিজ্জার মতোই ইতালির আরকেটি জনপ্রিয় খাবার। বাহির ক্রিস্পি ব্রেডক্র্যাম্প দিয়ে মুড়িয়ে ডীপ ফ্রাই করা এই রাইস বলটির ভেতরের পুর হিসেবে ব্যবহার করা হয় রাগ্যো, টমেটো সস্, মোজারেলা, বিভিন্ন ধরনের মটরের মিশ্রণ। আর সব খাবারের মতোই অঞ্চলভেদে রয়েছে ভিন্ন মিশ্রণের পুরসহ বিভিন্ন আকৃতির অ্যারানচিনি।
লাজানিয়া (Lasagne): ধারণা করা হয় এই খাবারটি এসেছে নেপলস্ এর শহর থেকে। এটি একটি ক্লাসিক ডিশ। সাধারণত পাস্তার একটি বেকিং শীটের উপর চীজ, গ্রাউন্ড মীট, বিভিন্ন ধরনের ভেজিটেবল এবং বিভিন্ন রকমের সসের টপিং দিয়ে লাজানিয়া বানানো হয়।

প্রসচিউতো (Prosciutto): ইতালিয়ানদের আরেকটি জনপ্রিয় খাবার হল প্রসচিউতো। এটি মূলত শুকনো হ্যামকে পাতলা শীটের মত করে কেটে বানানো হয়। হালকা মসলাযুক্ত এই খাবারটি সাধারণত পাস্তা, চীজ এসবের সাথে পরিবেশন করা হয়। ইতালির মধ্যাঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চল প্রসচিউতো জন্য অধিক বিখ্যাত।
জেলেটো (Gelato): প্রায় আইসক্রীমের মত দেখতে স্মুথ ক্রীমি এই খাবারটি এর স্বাদের কারণে আইসক্রীমের চেয়েও অধিক জনপ্রিয়। দুধ, চিনি, বিভিন্ন ধরনের ফল এবং নানান রকমের বাদামের মিশ্রণে জেলেটো তৈরি করা হয়। ইতালি এসেছে অথচ জেলেটো টেস্ট করেনি এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
নকী (Gnocchi): খুব সহজে মজাদার ডিনার বানানোর জন্য নকী ইতালিয়ানদের মাঝে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার। নকী দেখতে অনেকটা ম্যাকরনির মতো হলেও, এটি ম্যাকরনির চেয়ে আরেকটু পুরু। শেফ জাহেদ এর মতে পুষ্টি ও খাদ্য উপাদানে পরিপূর্ণ এ খাবারটিতে আছে পনির, বাটার, ডিম ও নানা জাতীয় র্হাব।
কফি (Caffe): ইতালিয়ান কফি জগদ্বিখ্যাত। নানা ধরনের, নানা রকমের কফি রয়েছে ইতালিতে। প্রায় সব ধরণের কফিই এসপ্রেসোর উপর নির্ভর করে বানানো হয়। বিভিন্ন স্বাদের কফির মূল কাঁচামাল এই এসপ্রেসো। খুব কড়া এবং তেতো স্বাদের এই কফি প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন ধারণ করে যার জন্য কফি অ্যাডিক্টেডদের কাছে এসপ্রেসো অতুলনীয়। এসপ্রেসো ব্যবহার করে বিভিন্ন ফ্লেভারের কফি বানানো হয় যেমনঃ ক্যাপাচিনো, কফি লাত্তে, মোকা, মাক্কিয়াতো, ফ্ল্যাট হোয়াইট, অ্যাফাগাতো প্রভৃতি।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

dnt share any link

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম