সেরা পাঁচ জন ফুড রিভিউয়ার ইউটিউভার
১। মার্ক উইন্সঃ মার্ক উইন্স নিয়ে আমি আগেও লিখেছি বেশ কয়েক বছর আগেও, উনাকে নিয়ে নুতন কিছু বলা চলে না। তার কাজেই তিনি পরিচিত সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে। সম্প্রতি সময়ে তিনি একটা ভিডিও পোষ্ট দিলে ঘন্টা খানেকেই কয়েক লক্ষ ভিজিট হয়ে যায়। মুলত তিনি ২০০৯ সালে সম্ভবত খাবারের দুনিয়ার নেমে পড়েন। বাবা আমেরিকান, মা চায়নিজ এবং বেড়ে উঠেন কেনিয়াতে, এখন স্থায়ী হয়ে পড়ছেন থাইল্যান্ডে। বিয়ে শাদীও থাইল্যান্ডে, মাইশা নামে এক ছেলের পিতা তিনি। তার স্ত্রী তাকে এই কাজে সব সময়ে সাহায্য করে থাকেন, তিনি যেখানে যান স্ত্রী তার সঙ্গে থাকে, তিনি বলে থাকেন, লাভিং ওয়াইফ (আমরা অনেকেই তা বলতে পারি না!)! তার ব্লগ পোষ্ট গুলো দেখলে বুঝতে পারবেন, তিনি কতটা সহজ সরল! তার জীবনের কথাও তিনি কত নির্ভেজাল্ভাবে তার ব্লগে পরিবেশন করেন। বলতে গেলে এখন প্রায় সারা দুনিয়ার কোনাকাঞ্চি ভ্রমন করে ফেলেছেন এবং তার প্রায় হাজার খানেক ভিডিও আছে এপর্যন্ত, সপ্তাহে দুই দিন দুটো ভিডিও আপলোড করে থাকেন, অনেকে এখন দিন তারিখ মুখস্ত করে বসে থাকেন তার সেই সব ভিডিও দেখার জন্য।
২। বেষ্ট এভার ফুড রিভিও শোঃ এটি মুলত একাটা স্পন্সার্ড ভিডিও ব্লগ। পরিচালনা ও উপস্থাপনা করে থাকেন মিঃ সানি সাইড নামের এক জন ভদ্রলোক। তার উপস্থাপনা আমার কাছে বেশ ভাল লাগে, কথাবার্তা ও আচার আচরন অসাধারণ। স্পন্সার্ড বলে তাকে কখনো টাকা নিয়ে ভাবতে হয় না, ওয়ান ট্রিপ নামের একটা টুরিস্ট কোম্পানি তার ব্যয় বহন করে থাকে বলে জানা যায়। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া ইত্যাদি দেশে তারা টুরিষ্টদের নিয়ে নানান প্যাকেজে কাজ করে থাকে। মিঃ সানি মুলত টেনশনলেস হয়ে কাজ করেন বলে তার শো গুলো অসাধারণ এবং তিনি যেখানেই যান সাথে দোভাষী এবং ক্যামেরাম্যান নিয়ে যান ফলে তার ভিডিওর চিত্রায়ন অসাধারণ। তবে মিঃ সানি স্বাস্থ্য সচেতন, যা পান তা খান বটেই তবে আমি প্রায় খেয়াল করেছি, একটা লিমিট থেকেই! দুনিয়ার দামী খাবার গুলো তার সাইটে উঠে আসে, সাথে অচেনা, অজানা খাবারের কথাও তিনি দেখিয়ে দেন। তিনিও দ্রোন ব্যবহার করেন, ফলে শহরের উপর থেকেও দেখা যায়, অসাধারণ কাজ হয়। আমি শেফ জাহেদ সাপের কলিজা, রক্ত কি করে খাওয়া হয় তা আমি তার ব্লগেই দেখি। ফিলিপাইনের মফঃসলের খাবার গুলো কি জীবন্ত তার কথায় ও ক্যামেরায়।
৩। দি ফুড রেঞ্জারঃ মিঃ ট্রিভোর জেমস অনেকটা মিঃ মার্ক উইন্সের মতই, আচার আচরণ অনেকটা মার্ক উইন্সের সাথে মিলে যায়। আমি তার শো গুলো পছন্দ করি। বয়সে তরুন এই ভদ্রলোক বেশ কয়েক ভাষায় কথা বলতে পারেন। বিশেষ করে চীনা ভাষা মান্দারিনে তার দক্ষতা অসাধারণ। তার চীনের খাবারের ভিডিও গুলো দেখতে বসলে চোখ ফেরানো যায় না। তার আর একটা দক্ষতা হচ্ছে, তিনি যে কমিউনিটিতে যান, সেই কমিউনিটির ড্রেস পরেন ফলে তার উপস্থাপনা আরো ভাল লাগে। মুসলিম কমিউনিটিতে গেলে পাঞ্জাবি টুপি পরে খেতে বসে পড়েন। তার ইন্ডিয়ার নানান স্থানের ভ্রমনের ভিডিও গুলো এতই ভাল যে, আপনার মনে হবে আপনি এখন সেখানেই আছেন। দেখতে অতন্ত্য সুদর্শন জেমস প্রসঙ্গে আমি আরো জানার চেষ্টা করছি, তিনি মার্ক উইন্সের মত ব্যক্তিগত তথ্য দিতে এত উদার নন তবে অতান্ত্য পরিশ্রমি এই তরুণ আগামীতে আরো ভাল করবে নিশ্চিত। পথের ধারের খাবার দেখতে তিনি সেই খাবার কোথায় বানানো হয় সেই জায়গা গুলোও দর্শকদের সামনে তুলে ধরেন ফলে তার ভিডিওতে আলাদা একটা ফ্লেভার থাকে। তার ইংরেজী উচ্চারন সবালীল, যে কারো পক্ষে বোঝা কঠিন নয়!
৪। মাইকি চেংঃ মিঃ মাইকি চেং এখন নুতন করে নিজ নামে সারভাইভ করছেন (সারভাইভ কথাটা বলা চলে না, আমি যুতসই শব্দ পাচ্ছি না)। মুলত মাইকি ‘ট্রিকি ডামপিং’ নামের একটা ভিডিও বল্গ পরিচালনা করতেন, এখন নিজ নামেই পরিচিত হয়ে উঠছেন। তিনি দেখতে মুলত প্রিয় সিনেমা অভিনেতা জ্যাকি চেং এর মত, বেশ গাটা পেটা শরীর, খেতেও পারেন মাশাআল্লাহ। মুখে রুচির অভাব নেই! চোখে যা পড়ে তাই খেতে পারেন। এক বসাতে অনেক পদের খাবার সাবাড় করে দিতে পারেন। আমি মাইকি চেংকে জাপান বিশেষজ্ঞ বলবো, জাপানি খাবার নিয়ে তার ব্লগ গুলো থেকে চোখ ফেরানো যায় না। কুংফু ক্যারাটে জানা এই ভদ্রলোক আগামীতে আরো আরো চমৎকার ভিডিও আমাদের দেখাবেন। পথের ধারের খাবারতো আছেই, তার ব্লগে ছোট ও মাঝারি দোকানের খাবারো বেশ সুন্দর করে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। তিনিও এশিয়ার প্রায় সব দেশ ভ্রমন করে নিয়েছেন, ইন্ডিয়ার কলকাতাতে রসগোলা খেয়ে তার অভিব্যক্তি ছিল দারুন।
৫। ফারহানা ওভারসনঃ মিস ফারহানা ওভারসনকে মুলত এখন ফুডের দুনিয়া বুঝতে পারছে না, এখনো কম পরিচিত! তার সাবস্কিপশন কম হলেও আমি মনে করি আগামী এক দুই বছরে তিনি অসাধারণ উচ্চতায় উঠে পড়বেন। কারন তার কাজ, উপস্থাপনা, যোগাযোগ সব কিছুই অসাধারণ। ইংরেজী উচ্চারনের জড়তা আরো কেটে গেলে তিনি ছেলে ফুড ব্লগারদের সমকক্ষ হয়ে উঠবেন। তিনি মুলত কেনিয়া ফোকাসড ফুড ব্লগার, কেনিয়াতে তাকে মুলত সবাই চিনে থাকেন এবং কেনিয়াতেই থাকেন। মার্ক উইন্সের ব্লগ ধরে আমি তার খোজ পাই এবং আমি তাকে নিয়ে আশাবাদি। ভমনের ছোটখাট দিক গুলো তুলে ধরাতে তার জুড়ি নেই, লাভলী! কেনিয়ার মুম্বাসা শহরে থাকলেও নাইরোবিতেই যোগাযোগ, আজকাল তিনি দেশের বাইরে যাচ্ছেন এবং সম্ভত কিছু দিন আগে সিঙ্গাপুর সফর করে গেলেন। সিঙ্গাপুরের ভিডিও গুলো বেশ ইম্প্রেসিভ। তার উপস্থাপনা বেশ আন্তরিক, তবে রাস্তার খাবারকেই তিনি চমৎকার বর্ননা দিয়ে অসাধারণ উচ্চতায় নিয়ে যান। আমি তার আরো আরো সাফল্য কামনা করি