লং বা লবঙ্গ
মসলা হিসেবে #লবঙ্গ সকলের পরিচিত। এ লবঙ্গ খুবই ঝাঝালো, উপাদেয়, ঘ্রাণময় একটি #মসলা। মূলত ইন্দোনেশিয়ায় এর জন্ম। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ঘুরে বিশ্বের সর্বত্র এই মসলা ছড়িয়ে পড়েছে। ইন্দোনেশিয়ায় এর আদিবাস হলেও্ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকায় সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়।
এর রয়েছে যথেষ্ট #পুষ্টিগুণ।
সাধারণত রান্নার সময়
এই মসলাটি ফোড়ন হিসেবে #ব্যবহৃত হয়। শুধু মসলা নয় ওষুধ হিসেবেও লবঙ্গের বেশ গুরুত্ব আছে। এতে ২০-২৫ শতাংশ ক্লোভ তেল এবং ১০-১৫ শতাংশ টাইটার পেনিক এসিড থাকে, যার ফলে এটা খেতে ঝাঁজালো। এর আরেক নাম “লং”। মার্চ থেকে জুন মাসের ভেতরে ফুল থেকে ফল হয়। পাকার আগেই বৃতিসহ ফুলের কুঁড়ি সংগ্রহ করা হয়। আর তা রোদে শুকিয়ে আমাদের #পরিচিত লবঙ্গ তৈরি হয়। লবঙ্গ গাছ ৩০ থেকে ৪০ ফুট উঁচু হতে পারে। চিরসবুজ, বহুসংখ্যক নরম ও নিম্নগামী ডাল চারদিক ছড়িয়ে পড়ে। ছাল ধূসর বর্ণ ও মসৃণ। পাতা সরল ও বিপরীত। উপবৃত্তাকার, পাঁচ ইঞ্চির মতো লম্বা। কচি পাতা লালচে। ফল মাংসল, প্রায় এক ইঞ্চি লম্বা।

বাংলায়: লবঙ্গ বা #লং
ইংরেজী: #Clove
বৈজ্ঞানিক নাম: Syzygium aromaticum
গোত্র: Myrtaceae।
পুষ্টিমান:
১০০ গ্রাম লবঙ্গে
৬৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট,
৬ গ্রাম প্রোটিন,
১৩ গ্রাম টোটাল লিপিড,
২ গ্রাম সুগার,
২৭৪ কিলো-ক্যালোরি শক্তি
৩৩ গ্রাম ডায়েটারি ফাইবার থাকে।
খনিজের মধ্যে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিঙ্ক -কমবেশি সবই আছে। আর ভিটামিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বি-৬, বি-১২, সি, এ, ই, ডি, কে, থায়ামিন, রাইবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, ফোলেট রয়েছে। এইসব যৌগের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য আছে।
লবঙ্গ কী কী কাজে লাগে?
লবঙ্গ তিনভাবে ব্যবহৃত হয়- আস্ত, গুঁড়ো ও তেল হিসেবে। এই উপাদান আমরা বেশির ভাগ সময় রান্নার ক্ষেত্রেই ব্যবহার করে থাকি। তবে দৈনন্দিন অন্য কাজেও একে ব্যবহার করা যায়।
• লবঙ্গের তেল শুষ্ক ত্বকের জন্য বেশ কার্যকর। ঘুমানোর আগে তুলায় এই তেল নিয়ে পুরো মুখে লাগিয়ে ঘুমান। এতে ত্বকের শুষ্কতা দূর হয়ে ত্বক হবে কোমল ও মসৃণ।
• মশা দূর করে লবঙ্গ। লেবু কেটে এর মধ্যে লবঙ্গ লাগিয়ে মশা হওয়ার জায়গাগুলোতে রেখে দিন। এতে মশার সমস্যা অনেকটা দূর হবে।
• যদি আপনার হজমে সমস্যা হয় তাহলে একটা লবঙ্গ চিবিয়ে রস খেয়ে ফেলুন। কিছুক্ষণ পর ঠিক হয়ে যাবে।
• চিনির কৌটার মধ্যে লবঙ্গ দিয়ে রাখুন। এতে চিনিতে পিঁপড়া আসবে না।
• দাঁতে ব্যথা করলে মুখের মধ্যে লবঙ্গ রেখে দিন। দেখবেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যথা দূর হয়ে যাবে।
• লবঙ্গ ব্রন দূর করে। এক চা চামচ লবঙ্গ গুঁড়ো, এক চা চামচ মধু ও দুই তিন ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে অনেক দ্রুত ব্রনের সমস্যার সমাধান হবে।
• লবঙ্গ মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। যাদের মুখে দুর্গন্ধের সমস্যা রয়েছে তারা সবসময় মুখে লবঙ্গ রাখুন।
• চোখের ফোলাভাব দূর করতে রাতে ঘুমানোর আগে চোখের নিচে লবঙ্গের তেলে লাগিয়ে ঘুমান। এতে চোখের ফোলাভাব অনেকাংশে কমে যাবে।
• কানে কোনো সমস্যা থাকলে লবঙ্গের তেল কয়েক ফোঁটা কানের মধ্যে দিয়ে রাখুন। এতে ব্যথাও কমে যাবে আবার সংক্রমণও দূর হবে।
• একটি বোতলে পানির মধ্যে লবঙ্গের তেল মিশিয়ে ভালো করে ঝাঁকিয়ে স্প্রে করুন। এটি প্রাকৃতিক ফ্রেশনারের কাজ করবে।
• ত্বকের ফাটা দাগ দূর করতে নিয়মিত লবঙ্গের তেল ব্যবহার করুন।
লবঙ্গের গুণাগুণ
সর্দি-কাশিতে লবঙ্গের উপকারিতা সকলেই জানেন। তবে এর কার্যকারিতার পরিধি আরও বিস্তৃত
cloves
রান্নায় স্বাদ আনে ঝাঁঝ লবঙ্গ। গলা খুসখুস করলে বাড়ির বড়রা বলেন, মুখে লবঙ্গ রাখতে। ভারতীয় উপমহাদেশে রান্নার মশলা হিসেবে এর ব্যবহার বেশি। তবে গবেষণায় বারবার প্রমাণিত, রোগ নিরাময়ে লবঙ্গের কার্যকারিতা রয়েছে।
• ম্যাঙ্গানিজ়ের উৎস: এক চা চামচ (৫ গ্রাম) লবঙ্গে পাওয়া যায় কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ভিটামিন কে ও ম্যাঙ্গানিজ়। মস্তিষ্কের বিভিন্ন কাজকর্ম সুষ্ঠু রাখতে ও হাড় শক্ত করতে ম্যাঙ্গানিজ় খুব জরুরি। ম্যাঙ্গানিজের একটি উৎকৃষ্ট উৎস হল লবঙ্গ।
• অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট: লবঙ্গে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে, যা ফ্রি র্যাডিকলস কমাতে সাহায্য করে। লবঙ্গের একটি উপাদান হল ইউজেনল, যা প্রাকৃতিক অ্যান্টি- অক্সিড্যান্ট হিসেবে কাজ করে।
• ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে: লবঙ্গের আর একটি উপাদান হল নাইজেরিসিন। বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এই উপাদানের জন্যই রক্ত থেকে শর্করা বিভিন্ন কোষে পৌঁছে দেওয়া, ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলির কার্যক্ষমতা বাড়ানো ও ইনসুলিন নিঃসৃত হওয়ার পরিমাণ বাড়ানোর মতো কাজ ভাল ভাবে হয়। তাই মধ্য মাত্রার ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে লবঙ্গ ভাল কাজে দেয়।
• অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়া: সর্দি-কাশি, সাইনাসের ব্যথায় লবঙ্গ তেল মালিশের কথা অনেকেই জানেন। এর অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়া ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণের জন্যই দাঁতের ব্যথায়ও এটি খুব উপকারী। নিয়মিত লবঙ্গ দেওয়া মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করলে মাড়ি সুস্থ থাকে। ব্যাকটিরিয়ার হাত থেকে দাঁত বাঁচায়।
• পাকস্থলীর আলসারের নিরাময়ে: সংক্রমণ, স্ট্রেস বা জিনগত কারণে পেপটিক আলসার বা স্টমাক আলসারের সমস্যা বাড়ে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, লবঙ্গের এসেনশিয়াল অয়েল গ্যাসট্রিক মিউকাসের উৎপাদনে সাহায্য করে। এই মিউকাসই সংক্রমণের হাত থেকে পাকস্থলীকে রক্ষা করতে ঢাল হিসেবে কাজ করে।
• হাড়ের চিকিৎসায়: লো-বোন মাস এমন একটি অবস্থা, যা বয়োজ্যেষ্ঠদের মধ্যে অস্টিয়োপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। কয়েকটি পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, লবঙ্গের উপাদান হাড়ের জোর ও বোন ডেনসিটি বাড়াতে সাহায্য করে।
কী কী ভাবে খাওয়া যায়?
• সর্দি লাগলে লবঙ্গ দেওয়া চা হামেশাই খাওয়া হয়। গার্গল করার সময়ে জলে লবঙ্গ দিলে, ওর ঝাঁঝে অনেকটা উপশম হয়।
• গরম জলে পাঁচ মিনিট লবঙ্গ ফুটিয়েও সেই জল পান করা যায়।
• কাঁচা লবঙ্গ চিবিয়ে বা নুন মাখিয়ে খাওয়া যায়।
• মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
সতর্কতা
• অনেকে অকারণেই মুখে লবঙ্গ রাখতে পছন্দ করেন। অতিরিক্ত লবঙ্গ খেলে বিষক্রিয়ার ভয় থাকে।
• অতিরিক্ত লবঙ্গ রক্ত পাতলা করে দেয়। রক্ততঞ্চনেও অনেক সময়ে বাধা দেয়। হিমোফিলিয়া রোগীদের এ ক্ষেত্রে ভয় বেশি।
• যাঁদের সুগার কমে যাওয়ার প্রবণতা থাকে, তাঁদের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত লবঙ্গ হাইপোগ্লাইসিমিয়ার কারণ হতে পারে।
• লবঙ্গ বা লবঙ্গের তেলে অ্যালার্জি হচ্ছে কি না, নজর রাখতে হবে।
মনে রাখতে হবে, আদা, হলুদের মতো লবঙ্গের নানাবিধ ভেষজ গুণ নিয়ে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। তাই কোন রোগের নিরাময়ে এর কতটা ব্যবহার করবেন, তা চিকিৎসকের অনুমতি সাপেক্ষ।