প্রোটিন | Protein



প্রোটিন | Protein

প্রোটিন জাতীয় খাদ্য আমাদেরকে শক্তিশালী করে
প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন মাছ, বাদাম, ও দুধ
প্রত্যেকেরই বলশক্তি, বৃদ্ধি পাওয়া, এবং অসুস্থ্যতা ও আঘাত থেকে সেরে উঠার জন্য প্রোটিনের প্রয়োজন। প্রোটিনযুক্ত খাবারের মধ্যে আছে:
ডাল, মটরশুঁটি, শিমের বীচি, বা অন্যান্য ডাল।
মূল জাতীয় বাদাম, গাছ ধরা বাদাম, এবং বিভিন্ন বীজ।
ডিম।
আপনার বসবাসের এলাকায় পাওয়া যায় এমন যে কোন ধরনের মাংস: বড় বা ছোট প্রাণী, পাখী, খোলসযুক্ত মাছ, বা পোকা।
দুধ, পনির, এবং দই।
কোন কোন ব্যক্তি ভাল করে দুধ হজম করতে পারে না। আপনার যদি এই সমস্ত খাবার খেয়ে পেটে ব্যথা হয় তবে আপনি হয়তো দুগ্ধজাত খাবার অসহিষ্ণু এবং এর পরিবর্তে আপনার অন্যান্য প্রোটিন খাওয়া উচিত।
তুষ বা অঙ্কুর না সরানো পুর্ণ শস্যদানা যেমন বাদামী চাল বা পূর্ণ গমের আটায়ও প্রোটিন থাকে। ভোগ্য অনেক মাশরুমেও তা থাকে।
একটি শিশু একটি ডিম ধরে আছে আর তার দৃঢ় বাহু পেশী দেখাচ্ছে
আপনি মাংস খেয়ে যে পরিমাণে স্বাস্থ্যবান হবেন ঠিক সেই একই পরিমাণে স্বাস্থ্যবান আপনি হতে পারেন শিমের বীচি, বাদাম, ও উদ্ভিদ থেকে পাওয়া অন্যান্য প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়ার মাধ্যমে। এবং উদ্ভিজ্য প্রোটিন উৎপাদন করা বা ক্রয় করা বেশীরভাগ সময়ই মাংস জাতীয় প্রোটিনের থেকে অনেক বেশী সস্তা।
আমাদের নিয়মিতভাবেই প্রোটিন খাওয়া উচিত। শেফ জাহেদ আরো বলেছেন গর্ভবতী নারী, শিশু, বয়ষ্ক মানুষ, এবং যারা অসুস্থ্যতা থেকে আরোগ্য লাভ করছে তাদের প্রতিদিন প্রোটিন জাতীয় খাবারের প্রয়োজন। যাদের সব থেকে বেশী প্রয়োজন সেই সমস্ত ব্যক্তিদের এই সব শক্তি-প্রদানকারী খাবার দেওয়া নিশ্চিত করুন।
সবজি ও ফল আমাদের দেহ রক্ষা করে
ফল ও সবজি যেমন আনারস, আভোকাডো ও গাজর
প্রতিদিন ফল ও সবজি খেতে চেষ্টা করুন। এগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও আকরিক আছে যেগুলো:
  • আমাদের দেহের ভিতরের অঙ্গগুলোকে রক্ষা করে।
  • আমাদের চোখ, ত্বক, দাঁত, এবং চুলকে মজবুত রাখে।
  • আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে সচল রাখে এবং আমাদের স্বাভাবিক মল তৈরীতে সাহায্য করে।
  • আমাদের সংক্রামণ ও রোগ জীবাণু থেকে রক্ষা করে।
  • আপনি যেখানে বাস করেন সেখানে উৎপাদিত ফল ও সবজিগুলো আমদানি করা গুলোর সমপরিমাণেই স্বাস্থ্যকর। এবং এগুলো সাধারণতঃ কম দামে বা বিনা দামে কেনা যায়।
একদল শিশু একটি লম্বা লাটি দিয়ে একটি ফলগাছ থেকে ফল পাড়ছে
রকমারী ফল ও সবজি খান। নীচেরগুলোসহ যে কোন সবজি বা ফল স্বাস্থ্যকর:
স্কোয়াশ।
তরমুজ।
গোল মরিচ, ও অন্যান্য মরিচ।
টাটকা মটরশুঁটি ও শিমের বীচি।
যে কোন জাম জাতীয় ফল।
আম, পেপে, পেয়ারা, কমলা, ও অন্যান্য ফল যেগুলো গাছে ধরে।
সবুজ শাক — চাষ করা বা ভোজ্য বন্য সবুজ শাক উভয়ই ভাল এবং মূলজাতীয় সবজির পাতাগুলোও ভাল, যার মধ্যে আছে মিষ্টি আলু, শালগম, এবং কচু।
বিভিন্ন রঙের সবজি বা ফলের মিশ্রণ ভিটামিন ও আকরিকের একটি ভাল বৈচিত্র পেতে সাহায্য করে।
বিভিন্ন বীচি ও শিমের বীচি অঙ্কুরায়িত করা
এক বাটি জলের মধ্যে শিমের বীচি ভিজানো আছে
আরও বেশী ভিটামিন ও আকরিক পাওয়ার জন্য বিভিন্ন বীচি ও শিমের বীচিগুলোকে অঙ্কুরায়িত করুন।
একমুঠ শিমের বীচি, শস্যদানা, বা অন্যান্য বীচি জলপূর্ণ একটি বোল বা একটি পাত্রে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন।
বীচিগুলোকে একটি ছাঁকনি দিয়ে ছাঁকা হচ্ছে
পরের দিন একটি ছাঁকনি বা একটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ভাল করে ছেঁকে নিন। যতখানি পারেন এর থেকে জল ঝড়িয়ে ফেলুন।
প্রতিদিন এগুলোকে একবার বা দু’বার করে ভিজান ও এর থেকে জল ঝড়িয়ে ফেলুন যাতে এগুলো না শুকিয়ে যায়।
এক বাটি অঙ্কুরায়িত বীচি
শীঘ্রই সাদা অঙ্কুর জন্মাতে শুরু করবে। কয়েক দিনের মধ্যে যখন ছোট সবুজ পাতা দেখা যাবে তখন এই অঙ্কুরগুলো কাঁচা বা সামান্য একটু রান্না করে খাওয়ার জন্য প্রস্তুত।
খাদ্যের বৈচিত্রের অভাবে সৃষ্টি সমস্যাসমূহ
আমরা যখন বিভিন্ন ধরনের রকমারী খাবার না খাই, তখন আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন ও আকরিক পাই না। এগুলো অসুস্থ্যতার সৃষ্টি করতে পারে।
রক্তস্বল্পতা ও লৌহ পদার্থ
ক্লান্তি, দুর্বলতা, এবং দ্রুতশ্বাস সাধারণতঃ রক্তস্বল্পতার — রক্তে লৌহ পদার্থের অভাব — কারণে ঘটে থাকে ।
রক্তস্বল্পতা বিশেষ করে নারীদের মধ্যে সচরাচর দেখা যায়, যারা তাদের মাসিক রক্তক্ষরণের সময় লৌহ পদার্থ বের হয়ে যায়। রক্তস্বল্পতার কারণে জন্মানো শিশুর আকার অনেক ছোট হতে পারে এবং জন্মদানের সময় রক্তক্ষরণ বেশ মারাত্মক হয়ে হয়ে উঠতে পারে।
হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ জানতে রক্ত পরীক্ষা রক্তে লৌহ পদার্থের পরিমাণ পরীক্ষা করে দেখে।
একজন নারী তার ফ্যাকাশে মাঢ়ী ও চোখের পাতার ভিতরের অংশ দেখাচ্ছে
রক্তস্বল্পতার চিহ্ন
ফ্যাকাশে মাঢ়ী ও চোখের পাতার ভিতরের অংশ
দুর্বলতা
ক্লান্তি
মাথা ঘুরানো
শ্বাস নেয়ায় সমস্যা
পদার্থ-সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, গুড় এবং সবুজ সবজি
চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
লৌহ পদার্থ-সমৃদ্ধ খাবার খান:
শিমের বীচি, মটরশুঁটি, এবং ডাল
সবুজ পাতা ও সমুদ্র-শৈবাল
শুকানো ফল
বীচি ও বাদাম
হাঁস-মুরগী, মাছ, খোলোসযুক্ত মাছ, বা ছোট ছোট প্রাণীসহ যে কোন ধরনের মাংস
লোহার পাত্রে রান্না করলে খাবারে লৌহ পদার্থ যুক্ত হয়।
বিভিন্ন অঙ্গের মাংস যেমন যকৃত এবং হৃদপিণ্ড, ও রক্ত দিয়ে তৈরী করা খাবার স্বল্পমূল্যের ও বিশেষভাবে লৌহ পদার্থ সমৃদ্ধ।
খুব ফ্যাকাশে, ক্লান্ত, বা দুর্বল কোন ব্যক্তি, বা যে ব্যক্তির প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হয়েছে তার মারাত্মক রক্তস্বল্পতা থাকতে পারে এবং তার লৌহ-পদার্থের বড়ি খাওয়া উচিত
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার আমাদের দেহকে আমাদের খাওয়া খাবার থেকে আরও বেশী পরিমাণে লৌহ পদার্থ পেতে সাহায্য করে। তাই খাবার সময় লৌহ পদার্থ-সমৃদ্ধ খাবারের সাথে সাথে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারও খান।
সবুজ সবজি ও টমেটো, কমলা, পেপে, আম, তরমুজ, ও জাম জাতীয় ফলসহ বেশীরভাগ ফলেই ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
রাতকানা রোগ ও ভিটামিন এ
একটি শিশু রাতের বেলায় একটি পাথরে হোচোট খেয়ে পড়ছে
ভিটামিন এ-এর অভাবে শুধুমাত্র অল্প আলোতে কোন কিছু দেখতে না পাওয়ার (রাতকানা) কারণই ঘটায় না বরং তা সম্পূর্ণ অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। ভিটামিন এ স্বাস্থ্যবান ত্বক ও হাড়ের জন্য ও সংক্রামণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যও প্রয়োজন হয়। শিশু ও নারীরা বিশেষ করে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন এ-এর অভাবে ভোগে।
আপনি যদি ভিটামিন এ যুক্ত যথেষ্ট পরিমাণে খাবার না খান তবে:
ভিটামিন এ যুক্ত যথেষ্ট পরিমাণে খাবার না খাওয়ার কারণে সৃষ্ট চিত্রে দেয়া এই তিন ধরনের অন্ধত্বের বিষয়ে নীচে আলোচনা করা হয়েছে প্রথমে অল্প আলোতে দেখায় আরও বেশী অসুবিধা।
পরে, চোখ শুষ্ক হয়ে যায়। চোখের সাদা অংশ এর ঔজ্যলতা হারায় এবং কুঁচকাতে শুরু করে। ছোপ ছোপ ছোট ছোট ধূসর ফোঁসকা (বিটট-এর দাগ) দেখা দিতে পারে।
রোগটি আর খারাপের দিকে গেলে কর্ণিয়াটি হয়তো ঘোলা ও ছোট ছোট গর্তযুক্ত হতে পারে।
তারপর কর্ণিয়াটি হয়তো তাড়াতাড়ি নরম হতে, ফুলে যেতে বা এমনকি ফেঁটে যেতেও পারে। সাধারণতঃ এখানে কোন ব্যথা থাকে না, কিন্তু অন্ধত্ব ঘটতে পারে।
আপনার এলাকাতে পাওয়া যায় এমন সমস্ত ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে আপনার চোখ রক্ষা করুন।
বেশীরভাগ কমলা ফল ও সবজি — যেমন কুমড়া, গাজর, মরিচ, কমলা তরমুজ, পেপে, আম, বা কমলা মিষ্টি আলু
বেশীরভাগ সবুজ সবজি — যেমন সবুজ শাক, মটরশুঁটি, এবং অন্যান্য বুনো ভোজ্য শাক
যকৃত
ডিম
এই ভিটামিনের অভাব থেকে যদি চোখের ক্ষতির কোন চিহ্ন দেখা যায় তবে ভিটামিন এ (সাধারণতঃ ফোঁটা হিসেবে) সম্পূরক প্রয়োগ করা উচিত। হামের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে শিশুদের অন্ধত্ব রোধ করতে তাদেরকেও ভিটামিন এ সম্পূরক দেয়া যেতে পারে।
গলগণ্ড ও আয়োডিন
খাবারে আয়োডিনের অভাবে গলা ফুলে যাওয়াকে বলে গলগণ্ড। একজন গর্ভবতী নারীর খাবারে আয়োডিনের অভাবে বধিরত্ব ও শিশুটির ক্ষেত্রে অন্যান্য শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধিতা সৃষ্টি করতে পারে। মায়ের যদি গলগণ্ড নাও থাকে তবুও শিশুটির ক্ষেত্রে এগুলো ঘটতে পারে।
গলগণ্ড ও আয়োডিনের অভাব রোধ করার সবথেকে সহজ উপায় হচ্ছে আয়োডিনযুক্ত লবন (প্রক্রিয়াজাত করার সময় আয়োডিন যুক্ত করা লবন) ব্যবহার করা। এর ফলে বেশীরভাগ গলগণ্ডই রোধ হয় এবং গলগণ্ড দূর হয়ে যায়। (পুরাতন, শক্ত গলগণ্ড শুধুমাত্র শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে সরানো যায়, কিন্তু সাধারণতঃ তার প্রয়োজন হয় না।) আপনি আয়োডিন আছে এমন খাবারও খেতে পারেন যেমন মাছ, খোলসযুক্ত মাছ, সামুদ্রিক শৈবাল, এবং সমুদ্র থেকে সংগ্রহ করা অন্যান্য খাবার। কিন্তু কিছু কিছু পাহাড়ী এলাকায় খাবার থেকে যথেষ্ট পরিমাণে আয়োডিন পাওয়া সম্ভব নয়।
একজন গলগণ্ডযুক্ত নারী একটি সাধারণ লবনের ঠোঙা ধরে আছে, এবং গলগণ্ড না থাকা একজন নারী একটি আয়োডিনযুক্ত লবনের ঠোঙা ধরে আছে
আয়োডিনযুক্ত লবনের দাম অন্যান্য লবন থেকে মাত্র সামান্য বেশী
কিন্তু আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভাল।
আপনি যদি লবনকে আয়োডিনযুক্ত করতে না পারেন তবে আপনার হয়তো আয়োডিন সম্পুরক খাবার খেতে হবে ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

dnt share any link

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম