অ্যাভোকাডো | Avocado

প্রতিদিন যে কোনও একটা ফল খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী- একথা তো আমরা সবাই জানি৷ আমরা অনেকেই হয়তো সেই অনুযায়ী প্রতিদিন একটা করে ফল খাই৷ তবে সাধারণত যে ফলগুলি আমরা রোজ খাই, তার তালিকায় অ্যাভোক্যাডো থাকে না৷ অথচ এই ফলটিতে রয়েছে নানান ধরনের পুষ্টিগুণের সমাহার৷ তাছাড়া অ্যাভোক্যাডোয় রয়েছে উপকারী ফ্যাট, যা হার্টের কার্যকারিতাকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে৷

অ্যাভোকাডো

এমনিতে নিউজিল্যান্ড অ্যাভোক্যাডো অনেক ধরনেরই হয়৷ এর মধ্যে হ্যাস অ্যাভোক্যাডোর পুষ্টিগুণই সবচেয়ে বেশি৷ হ্যাস অ্যাভোক্যাডো প্রধানত নিউজিল্যান্ডের ফল৷ হ্যাস অ্যাভোক্যাডো দিনের যে কোনও সময়তেই খাওয়া যায়৷ এছাড়া অ্যাভোক্যাডোর স্বাদ এমনই যে এই ফলটি বিভিন্ন ভারতীয় খাবারেই ব্যবহার করা যায়৷ বিভিন্ন তরকারিতে তো বটেই, এমনকি ফ্রুটস পোলাওতেও অ্যাভোক্যাডো যোগ করতে পারেন৷ আবার ভেলপুরির মতো স্ট্রিটফুডও যদি বাড়িতে ট্রাই করা হয়, তাহলে অন্যান্য উপকরণের সঙ্গে অ্যাভোক্যাডোর টুকরোও অবশ্যই মেশান৷ দেখুন আপনার প্রিয় স্ন্যাকসের স্বাদ আরও খুলবে৷ আর খাবারের পুষ্টিগুণও অনেকটাই বাড়বে৷ শুধু তাই নয় হ্যাস অ্যাভোক্যাডো খাবারের রঙকে আরো সুন্দর করে তোলে৷ নিয়মিত এই ফলটি খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরের অনেকটাই এনার্জি পাওয়া যায়৷ বিশেষ করে অনেকক্ষণ শরীরচর্চা করার পর, অ্যাভোক্যাডো খুবই উপকারী৷ শরীরের সমস্ত ক্লান্তিকে দূর করে দেবে৷

অ্যাভোক্যাডোয় রয়েছে প্রায় ২০ রকমের ভিটামিন৷ রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং গুড ফ্যাট৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো অ্যাভোক্যাডোয় একেবারেই কোনও কোলেস্টেরল নেই৷ এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে৷ ফলে এটি হজমের সহায়ক৷ ব্রেকফাস্টে অ্যাভোক্যাডো আর কিউয়ি একসঙ্গে ব্লেন্ড করে নিয়ে সুস্বাদু স্মুদি তৈরি করে নিতে পারেন৷ আবার লাঞ্চে দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে লস্যি বানিয়েও খেতে পারেন৷ দুটি পদ খেতে তো ভালোই, আপনার খাবারও চটপট হজম করতে সাহায্য করবে৷ ব্রেকফাস্টে বা ইভনিং স্ন্যাক হিসেবে ফ্রুট স্যালাডেও অ্যাভোক্যাডো যোগ করতে পারেন৷ বিশেষ করে, তরমুজ, কিউয়ি, স্ট্রবেরির মতো ফলের সঙ্গে অ্যাভোক্যাডো দিলে তাতে, ফ্রুট স্যালাডের স্বাদ আরও বাড়বে৷ পরোটার পুরে চিজ ও অ্যাভোক্যাডো মিশিয়ে দেখুন৷ বাচ্চারা চেটেপুটে খেয়ে নেবে৷ চিকেন বা স্যালমোন জাতীয় মাছে অন্যরকম ফ্লেভার আনার জন্য অ্যাভোক্যাডো অন্যতম উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে৷ অ্যাভোক্যাডোর স্বাভাবিক ক্রিম টেক্সচার থাকায় নানান ধরনের ডেজার্টেও এটিকে ব্যবহার করা যায়৷ চকোলেট অ্যাভোক্যাডো মুস তো আমাদের অনেকেরই প্রিয়৷ এছাড়া আইসক্রিমেও অ্যাভোক্যাডো ব্যবহার করা যায়৷

অ্যাভোকাডোর স্বাস্থ্য উপকারিতা :


  • ওজন কমাতে সহায়তা করে:

অ্যাভোকাডো এমন একটি ফল যা দেহে পুষ্টি সরবরাহ করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে।অ্যাভোকাডো খাওয়ার নিয়ম:সাধারণত সালাদের সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয় অ্যাভোকাডো। চুল নিয়ে সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত পান করতে পারেন অ্যাভোকাডো জুস।নিয়মিত অ্যাভাকাডো জুস খেলে উজ্জ্বল, কোমল ত্বক তো পাওয়া যাবেই, এটি শরীরের ভেতর থেকে সানস্ক্রিন হিসেবেও কাজ করবে।

  • হৃদপিণ্ডের জন্য

রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ান Patricia  Groziak, Ms, RD ও Hass Avocado Board  এর মতে, প্রতি আউন্স অ্যাভোকাডোতে ২৫ মিলিগ্রাম বিটা সাইটোস্টেরল থাকে। নিয়মিত বিটা সাইটোস্টেরল ও অন্য উদ্ভিজ স্টেরল গ্রহণ করলে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাস্থ্যকর পর্যায়ে থাকে।


  • ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ সঠিক মাত্রায় রাখে 

অ্যাভোকাডোর মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্টকে বন্ধ করে এবং অ্যাভোকাডোর দ্রবণীয় ফাইবার রক্তের সুগার লেভেলকে সুস্থিত করে। অন্য ফলের তুলনায় অ্যাভোকাডোতে চিনি ও শর্করার পরিমাণ কম থাকে বলে রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।


  • দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে

অ্যাভোকাডোতে চোখের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় দুটি ফাইটোকেমিক্যাল লুটেইন ও জেনান্থিন থাকে। এই দুটি উপাদান চোখে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের কাজ করে যা চোখের ক্ষতি কমাতে পারে এবং বয়স জনিত চোখের সমস্যা ম্যাকুলার ডিজেনারেশন হওয়ার ঝুঁকি কমায়।


  • অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি এজেন্ট উপাদান রয়েছে 

অ্যাভোকাডোতে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান, ক্যারোটিনয়েড অ্যান্টিওক্সিডেন্ট, ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড এবং পলিহাইড্রক্সিলেটেড ফ্যাটি অ্যালকোহল আছে যা রিউম্যাটয়েড ও অষ্টিও আরথ্রাইটিস এর নিরাময়ে সহায়তা করে।

  • জন্মগত ত্রুটি রোধ করে

ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাভোকাডো কমিশনের মতে, হবু মায়েদের জন্য অ্যাভোকাডো অনেক ভালো। অ্যাভোকাডোতে পর্যাপ্ত ফলিক এসিড থাকে যা জন্মগত ত্রুটি যেমন- স্পিনা বিফিডা, নিউরাল টিউব ডিফেক্ট ইত্যাদি প্রতিরোধ করে।


  •  ক্যান্সার ঝুঁকি কমায়

মুখ, ত্বক ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় অ্যাভোকাডো। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদানের মিশ্র ক্রিয়ার জন্য এবং অ্যাভোকাডোর ফাইটোকেমিক্যাল ক্যান্সার কোষ উৎপন্ন হওয়া বন্ধ করে এবং মেরে ফেলে।


  • পরিপাক নালী পরিষ্কার রাখে 

অ্যাভোকাডোতে উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকে, একটি অ্যাভোকাডোর অর্ধেক অংশে ৬-৭ গ্রাম ফাইবার থাকে। ফাইবার সমৃদ্ধ ফল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে এবং পরিপাক নালী সুস্থ থাকে।তাছাড়া অ্যাভোকাডোতে ভিটামিন থাকায় ত্বকের জন্য উপকারী, ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে, ডিপ্রেশনের ঝুঁকি কমায় ও বিভিন্ন প্রকার ক্রনিক ডিজিজ ঝুঁকি কমায়।


  • অন্যান্য ফলের মতই অ্যাভোকাডো ও বেশি খেলে সমস্যা হতে পারে। কারণ এতে ফ্যাট আছে, তাই অনেক বেশি পরিমাণে অ্যাভোকাডো খেলে ওজন বৃদ্ধির সমস্যা হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে অ্যাভোকাডো খেলে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে, যদিও এটা বিরল।

যদি একটি অ্যাভোকাডো খাওয়ার পর নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, কাশি, জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলা ও শরীর ফুলে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ গুলো দেখা দেয় তাহলে অ্যাভোকাডো খাওয়া বাদ দিয়ে দেখুন উপসর্গ গুলো চলে যায় কিনা। যদি সমস্যা বেড়ে যায় তাহলে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

dnt share any link

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম