ধনিয়া | Coriander | Cilantro
ইংরেজী নামঃ coriander
বৈজ্ঞানিক নামঃ Coriander sativum
পরিবারঃ Umbelliferae
কালিনারি জগতে সিলানট্র নামে বেশি পরিচিত ।ইন্ডিয়ান মেক্সিকান প্রায় সব খাবারে এটা ফ্রেশ বেবহার করা হয়।
বিবরণঃধনে বিরুৎ জাতীয় তৃণ। এর পাতা ছোট, সবুজ, মসৃণ হয়। ডালপালা অনেক হয় ও দেখতে সরু।ছোট ছোট থোকায় থোকায় সাদা ফুল ফোটে। ফুল থেকে দানাকৃতির ফল হয়। ফল কাচা অবস্থায় সবুজ হয়।
বর্তমানে ধনিয়ার বারোমাসি জাতের কল্যাণে বর্ষার সময় টুকু ছাড়া সারা বছরই ধনিয়া পাতা সুঘ্রাণ ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে রমজান মাসে অল্প সময়ে বেশী লাভের আশায় কিছু চাষী অল্প পরিমান জমিতে ধনিয়া পাতার চাষ করে লাভবান হচ্ছে। রবি মৌসুমে এদেশে প্রায় সব জেলাতেই ধনিয়ার চাষ হয়ে থাকে। ঢাকার সাভার ও চাপাইনবানগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে ধনিয়া পাতার চাষ করা হচ্ছে। সাভারে কিছু চাষী ধনিয়ার সাথে সাথী ফসল হিসাবে ওলকপি চাষ করে বিঘা প্রতি ৫০-৬০ হাজার টাকা আয় করে থাকেন। এক পরিসংখ্যানে জানা যায় এদেশে প্রতি বছর ৬০০০ হেক্টর জমিতে ধনিয়া চাষ করা হয় এবং মোট উৎপাদন ৪০০০ টন। তবে বিশেষজ্ঞের মতে ধনিয়া চাষের জমির পরিমান ও উৎপাদন এর চেয়েও অনেক বেশী। ধনিয়ার আদি নিবাস ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে হলেও এখন বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্থান, মরোক্ক, রাশিয়া, হাঙ্গেরী, আমেরিকা সহ বিশ্বের অনেক দেশেই ধনিয়া চাষ হচ্ছে। ধনিয়া এবং এর পাতা দীর্ঘকাল ধরে আমাদের দেশে মসলা হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। তরকারী, আচার, চাটনীর স্বাদ ও সুঘ্রাণ বাড়াতে, সালাদ ও টেবিল সাজাতে ধনিয়ার গুড়া এবং পাতার বহুল ব্যবহার দেখা যায়। এছাড়াও ধনিয়া থেকে দামী তৈল পাওয়া যায় যা সুরা, কোকো ও চকোলেট তৈরীতে এমনকি আতর শিল্পেও এর ব্যবহার দেখা যায় । এর ঔষধিগুণও অপরিসীম।
জাতঃ দীর্ঘদিন ধরে দেশী জাতের ধনিয়া আমাদের দেশে চাষ হয়ে আসছে। এই জাত তুলনামূলকভাবে কষ্ট সহিষ্ণু, গাছ ছোট, কান্ড সুরু, পাতা ছোট, বীজ লনামূলকভাবে ছোট, ফলন কম কিন্তু পাতা ও বীজ খুব সুঘ্রাণযুক্ত। এসব জাত সমগ্র বাংলায় সাধারণত শীতকালেই চাষ করা হয়। বর্তমানে অনেক আধুনিক ও উচ্চ ফলনশীল জাত বের হয়েছে এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত ‘বারি ধনিয়া-১’ একটি আধুনিক উচ্চ ফলনশীল জাত। যেসব আধুনিক জাত পাতার জন্য সারা বছর চাষ করা হয় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম গ্রীন লিফ, কেরিবি, এএলবি-৬০, এলবি-৬৫, সুগন্ধা ইত্যাদি।
গ্রীন লিফ
অধিক বৃষ্টি ও গরম সহনশীল, দ্রুত বর্ধনশীল জাত, গাছ ঝোপালো। বীজ বোনার ৩০-৩৫ দিন পর থেকেই পাতা তোলা যায়। ফলন ২-৩ টন/একর।
কেরিবি
কেরিবি জাতের পাতা চওড়া ও অধিক সুগন্ধযুক্ত, আকর্ষনীয় সবুজ রং-এর পাতা, সারা বছর চাষ করা যায়। বীজ বোনার ৩৫ দিন পর থেকেই ৭-৮ বার পাতা তোলা যায়, সহজে ফুল ধরে না।
এলবি-৬০
এলবি-৬০ জাত দ্রুত বর্ধনশীল, উজ্জ্বল সবুজ রং-এর পাতা, দেরীতে ফুল আসে। হেক্টর প্রতি ফলন ২.০-২.৫ টন।
এলবি-৬৫
এ জাতের গাছে প্রচুর পাতা হয়, দেরীতে ফুল আসে। হেক্টর প্রতি ফলন ২.০-২.৫ টন।
সুগন্ধা
এটি একটি দ্রুত বর্ধনশীল জাত, বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিন পর পাতা সংগ্রহ করা যায়, ক্ষেতে বেশীদিন থাকে, দেরীতে ফুল আসে। হেক্টর প্রতি ফলন ২.০-২.৫ টন।
আবহাওয়া ও মাটিঃ এটি একটি শীতকালীন ফসল হলেও পাতা উৎপাদনের জন্য এপ্রিল-জুন মাসের তীব্র গরম বাদ দিয়ে প্রায় সারা বছরই চাষ করা চলে। বীজ উৎপাদনের জন্য তুষারপাত ও কুয়াশাহীন শুষ্ক ও শীতল আবহাওয়া প্রয়োজন। ফুল ও ফল ধরার সময় মেঘলা আবহাওয়া থাকলে রোগ পোকার আক্রমণ বেশী হয়। প্রচন্ড বৃষ্টিপাতেও গাছের বৃদ্ধি ও ফলন ব্যহত হয়। প্রায় সব রকমের মাটিতেই ধনিয়া চাষ করা যায়। শেফ জাহেদ এর মতে বেলে দোআঁশ থেকে এটেল দোআঁশ মাটি ধনিয়া চাষের উপযোগী। ধনিয়ার জমিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
উপকারিতাঃ
১. ত্বকের রোগ সারায় একজিমা, চুলকানি, ফুসকুড়ি এবং প্রদাহ মতো সমস্যা কমাতে দারুণ কাজে আসে ধনিয়া বীজ। একমুঠো ধনিয়া বিজ নিয়ে তার পেস্ট বানিয়ে ফেলুন প্রথমে। তারপর সেই পেস্ট ক্ষত স্থানে লাগান। দেখবেন অল্প দিনেই ত্বকের রোগ দূরে পালাবে।
২. চুলের বৃদ্ধিতে কাজে লাগে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এই মশলাটি রাখলে চুল পড়া তো কমবেই, সেই সঙ্গে চুল শক্তপোক্তও হবে।
৩. জ্বর-সর্দি-কশি কমায় ধনিয়া বীজে রয়েছে ভিটামিন এ, বিটা ক্যারোটিন, ফলিক এসিড এবং ভিটামিন সি। এই উপাদানগুলির সবকটিই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ঠাণ্ডা লাগা, সর্দি-কাশি এমনকী জ্বরের প্রকোপ কমাতেও সাহায্য করে।
৪. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে রক্তে শর্করা এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে ধনিয়া বীজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫. হজমক্ষমতা বাড়ায় হজমে সহায়ক পাচকরসের ক্ষরণে সাহায্য করে ধনিয়া বীজ। ফলে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। তাই যারা বদহজমের সমস্যায় ভুগছেন তারা খাবারের সঙ্গে অথবা সরাসরি ধনিয়া বীজ খাওয়া শুরু করুন। ভালো ফল পাবেন।
৬. কনজাংটিভাইটিসের প্রকোপ কমায় ধনিয়া বীজে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপার্টিজ রয়েছে। যে কারণে এই মশলাটি কনজাংটিভাইটিসের পাশাপাশি চোখের বেশ কিছু সমস্যা কমাতে ভালো কাজে আসে।
৭. পিরিয়ড সম্পর্কিত নানা সমস্যা কমায় এই সময় অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হয়? তাহলে আজ থেকেই খাদ্যতালিকায় যোগ করুন এই মশলাটিকে। কারণ ধনিয়া বীজ এই ধরনের সমস্যা কমায়, সেই সঙ্গে পিরিয়ডের যন্ত্রণা হ্রাসেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।