বার্গার
হ্যামবার্গার (Hamburger, বীফ বার্গার, বার্গার স্যান্ডউইচ, বার্গার বা হ্যামবুর্গ নামেও পরিচিত) বা বার্গার (Burger) হচ্ছে একপ্রকার স্যান্ডউইচ সদৃশ খাবার যা দুই প্রস্থ রুটির মধ্যে রান্না করা কিমা মাংস বা ফিলে দিয়ে তৈরি করা হয়। মাংস হিসেবে সাধারণত গরু ব্যবহার করা হলেও মুরগী, শূকর, টার্কি, বা বিভিন্ন রকম মাংসের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে বার্গারে মাংস হিসেবে প্রধানত ব্যবহৃত হয় মুরগী ও গরুর মাংস। বার্গারের রুটি বা বান তৈরিতে প্রধানত গমের আটা ব্যবহৃত হয়। এছাড়া রুটি হিসেবে বানের বদলে সাধারণ দু প্রস্থ পাউরুটির ব্যবহারও স্বীকৃত। হ্যামবার্গার তৈরি ও পরিবেশনে প্রায়ই সময়ই যে উপাদানগুলো ব্যবহৃত হয় তা হচ্ছে, লেটুস, টমেটো, পেঁয়াজ, শসা, পনির, এবং সস, যেমন: মাস্টার্ড, মেয়নেজ, এবং টমেটো কেচাপ। “হ্যামবার্গার” শব্দটি এসেছে জার্মানির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হ্যামবুর্গ থেকে।
অনেকেই ভুল ধারনা পোষন করেন এই মনে করে যে “হ্যামবার্গার” শব্দটি শূকরের মাংস থেকে এসেছে, আসলে ধারনাটি সম্পূর্ন ভুল। বার্গার আবিষ্কারের দাবিদারদের মধ্যে অন্যতম লুই লাসেন, চার্লি ন্যাগ্রিন, অটো কুয়েস, অস্কার ওয়েবার বিলনি, ফ্রাঙ্ক ও চার্লস ম্যানচেস এবং ফ্লেচার ডেভিস।
বিশ্বের মধ্যে জনপ্রিয় বার্গার চেইন গুলোর মধ্যে ম্যাকডোনাল্ডস, ওয়্যেনডিস, হোয়াইট ক্যাসেল, ফাডরাকার্স, সনিক, হারফি (হালাল বার্গার রেস্টুরেন্টের মধ্যে শীর্ষে), বার্গার কিং, কার্লস জুনিয়র, হার্ডিস, ফাইভ গাইস, শেক শ্যাক অন্যতম। বাংলাদেশেও বর্তমানে বার্গার তুমুল জনপ্রিয়।
ফ্রাইড চিকেন
যদি শুদ্ধ বাংলায় বলা হয় ভাজা মুরগি তাহলে অনেকেই হয়ত বুঝবেই না “ফ্রাইড চিকেন” এর জগৎ খ্যাত মহিমা। দুনিয়া জুড়ে বিগত ৮০/৯০ বছর ধরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে এই ডুবো তেলে ভাজা মুরগির আইটেমটি। ফ্রাইড চিকেনের জনপ্রিয়তার পেছনে কেএফসির জনক কর্নেল হারল্যান্ড স্যান্ডার্সের নাম না বললেই নয়। ম্যারিনেশন মিক্স এবং ব্রেডিং মিক্স ফ্রাইড চিকেনের অন্যতম প্রধান দুটি গোপনীয় উপাদান। গোপনীয় শব্দটি ব্যবহার করলাম কারন আপনি বাসায় অবিকল রেস্টুরেন্টের মত চিকেন ফ্রাই করতে পারবেন না। আরও দুটি বিশেষ জিনিষ উল্লেখ যোগ্য, চিকেন ম্যারিনেশনের জন্য বানিজ্যিক ভাবে ব্যবহৃত “ভ্যাকুয়াম টাম্বল্যর” এবং ডুবো তেলে ভাজার জন্য ব্যবহৃত “ডিপ ফ্রাইয়ার (ব্রোস্টার অথবা ওপেন ফ্রাইয়ার)”। প্রতিটি প্রতিষ্ঠিত ফ্রাইড চিকেন রেস্টুরেন্ট ব্র্যান্ড অত্যন্ত সতর্কতার সাথে তাদের রেসিপি এবং সাপ্লাইয়ার সোর্স গোপন রাখে। যেমন ধরুন, কর্নেল স্যান্ডার্সের ১১ হার্বসের কঠোর গোপনীয় রেসিপি বিশেষ কিছু মানুষ ছাড়া আজ পর্যন্ত কেউ জানেনা।
চকলেট
চকলেট বলতে নানা প্রকার প্রাকৃতিক ও প্রক্রিয়াজাত খাবারকে বোঝায় যা গ্রীষ্মমন্ডলীয় কোকোয়া গাছের বীজ থেকে উৎপাদন করা হয়। গ্রীষ্মমন্ডলীয় দক্ষিণ আমেরিকার নিম্নভূমির স্থানীয় উদ্ভিদ কোকো অন্তত তিনশত বছর মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকোতে চাষ করা হচ্ছে, এবং এর ব্যবহারের সবচেয়ে পুরনো লিখিত প্রমাণ হল ১১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের। বেশিরভাগ মেসো আমেরিকান লোকজনই চকলেট পানীয় তৈরি করত, যার মধ্যে আছে মায়া ও আজটেকরা, যারা xocolātl নামে একটি পানীয় তৈরি করেছিল, নাহুয়াতি ভাষায় যে শব্দটির মানে দাঁড়ায় তেতো পানীয়। কোকো গাছের বীজের তীব্র তেতো স্বাদ আছে, তাই চকলেটের স্বাদগন্ধ (Flavor) তৈরি করবার জন্যে অবশ্যই একে গাঁজিয়ে নিতে হয়। চকলেট পৃথিবীর জনপ্রিয়তম ফ্লেভারগুলোর একটি। বিভিন্ন পালা পার্বণে হরেক রকম চকলেট উপহার দেবার রীতি চালু আছে: ঈস্টার পর্বে চকলেটের খরগোশ ও ডিম উপহার খুবই জনপ্রিয়, চকলেটের মুদ্রা হানুক্কাহ, সান্তা ক্লজ ও ক্রিসমাসের অন্যান্য উৎসব প্রতীক, এবং ভালোবাসা দিবসে চকলেটের হৃদয়।
মূলত ৩ ধরনের চকলেট সবচেয়ে বেশী প্রচলিত: ডার্ক চকলেট, মিল্ক চকলেট এবং হোয়াইট চকলেট। এই চকলেট গুলো বিভিন্ন ধরনের কেক, ডেজার্ট ও আইসক্রিম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। চকলেটের জন্য বিখ্যাত বেলজিয়াম ও সুইজারল্যান্ড। বাংলাদেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আসল চকলেট উচ্চ মূল্যের জন্য ব্যবহৃত হয়না। প্রস্তুতকারিরা কোকো পাউডারের সঙ্গে চকলেট ফ্লেভার মিশ্রিত করে চকলেটের নানা পদ তৈরি করেন, যা অনেকের কাছেই অজানা। ফাইভ স্টার হোটেল, কিছু স্বনামধন্য বেকারী ও হাতে গোনা কিছু চকলেট ক্যাফে বানিজ্যিকভাবে আমদানিকৃত ২ থেকে ৫ কেজির আসল চকলেট ব্লক ব্যবহার করেন, যার দাম ব্র্যান্ড অনুযায়ী প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ১১০০ টাকার মধ্যে। বাংলাদেশে হালের ক্রেজ আইরিশ ব্র্যান্ড বাটলার্স চকলেট ক্যাফে এবং অস্ট্রেলিয়ান দ্য চকলেট রুম উচ্চ শ্রেনীর ভোক্তাদের মাঝে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
পিৎজা
বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পিৎজা পাওয়া যায়। সব বয়সের মানুষ ইতালিয়ান এই জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু খাবারটি পছন্দ করেন। সেন্ট্রাল বা মধ্য ইতালির (তাসকানি, আম্বরিয়া, লাৎসিও, ল্য মার্চে, আবরুজ্জো এবং মোলিস নিয়ে গঠিত অঞ্চল) জনপ্রিয় খাদ্য হিসেবে দশম শতকে লাতিন পান্ডুলিপিতে সর্বপ্রথম পিৎজা সম্পর্কে তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয় । ঈষ্ট মিশ্রিত ময়দার খামির থেকে পিৎজা তৈরি হয়, এর সাথে টমেটো এবং অন্যান্য মসলা (হার্বস) দিয়ে তৈরি পিৎজা সস্ এবং পছন্দ মত মাংসের বা মাছের টুকরা, বিভিন্ন ধরনের সব্জি এবং মোৎসারেল্লা চিজ দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন আপনার পছন্দের পিৎজা। আপনি চাইলে পিৎজা হাট বা ডোমিনোজের মত বিশ্বখ্যাত পিৎজা চেইনের রকমারি স্বাদের পিৎজার স্বাদ গ্রহন করতে পারেন অথবা বাসায় ওভেন থাকলে নিজেও সহজেই তৈরি করতে পারেন পিৎজা। বাংলাদেশে অবশ্য মহিষের খাটি দুধ থেকে প্রস্তুতকৃত মোৎসারেল্লা চিজ সহজলভ্য নয়। বিখ্যাত এই চিজটির জন্মস্থান ইতালির কাম্পানিয়া অঞ্চল।বিশ্বখ্যাত কিছু পিৎজা চেইনের মধ্যে ডোমিনো’জ, পিৎজা হাট, লিটল সিজার পিৎজা, পাপা জোনস, মার্কো’স পিৎজা অন্যতম। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক পিৎজা চেইন গুলোর মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ডোমিনো’জ, পিৎজা হাট, পিৎজা ইনের মত ব্র্যান্ডগুলো। স্থানীয় পিৎজা রেস্তোরা গুলোও পিছিয়ে নেই। বর্তমানে পিৎজা গাই, শর্মা হাউজ, বেল্ল্যা ইতালিয়া, পিৎজা রোমা দেশীয় পিৎজা প্রেমিকদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে।
আইসক্রিম
আইসক্রিম এক প্রকারের ফ্রোজেন ডেজার্ট, যা বরফ ও চিনি এবং প্রধানত দুধের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়। আইসক্রিম আইসক্রিমের জন্মস্থান চায়না। ইতালীয় পর্যটক মার্কো পোলো আইসক্রিম তৈরির কৌশলটি চায়না থেকে ইউরোপে নিয়ে আসেন। তৎকালীন সময়ে কুবলাই খানের লোকেরা ঠেলাগাড়ি করে জমাট দুধের খাবার বিক্রি করতো। মার্কো পোলো খাবারটি খেয়ে পছন্দ করেন এবং এর কৌশল শিখে নেন। এই খাবারটির নাম পরে হয় আইসক্রিম। ১৫৩৩ সালে আইসক্রিম ইতালি থেকে প্রথম ফ্রান্সে আসে এবং সেখান থেকে পরে যায় ইংল্যান্ডে। এরপর আমেরিকা সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আইসক্রিম ছড়িয়ে পড়ে। ১৯০০ সাল হতে আইসক্রিমের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়।
আইসক্রিম একটি দুগ্ধজাত খাদ্য। উপযুক্ত উপাদানের পাস্তুরিত মিশ্রণকে জমাট বাঁধিয়ে আইসক্রিম উৎপন্ন করা হয়। আইসক্রিমের মধ্যে দুগ্ধ চর্বি, দুগ্ধজাত উপাদান ছাড়াও চিনি, ভুট্টার সিরাপ, পানি, সুস্বাদু ও সুগন্ধিকারক বস্তু যেমন চকোলেট, ভ্যানিলা, বাদাম, ফলের রস ইত্যাদি যোগ করা হয়। হিমায়ন প্রক্রিয়ার সময় যে বায়ু একত্রীভূত করা হয় সে বায়ুও আইসক্রিমের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
বিশ্বখ্যাত ১০ টি আইসক্রিম ব্র্যান্ডস্ গুলো হল বাসকিন রবিনস, বেন এ্যান্ড জেরী, হ্যাগেন দ্যাজ, ডেইরি কুইন, ওয়ালস্, নেসলে, ব্লু বেল ক্রিমারিস, ব্রেয়ারস্, কোল্ড স্টোন ক্রিমারি এবং কার্টে ডি’ওর। বাংলাদেশের প্রথম আইসক্রিম পার্লারটির নাম ছিল ডলচে ভিটা। বর্তমানে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড গুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় মুভএনপিক, কোল্ড স্টোন ক্রিমারি এবং মার্বেল স্লাব ক্রিমারি। এছাড়াও বাংলাদেশে বানিজ্যিক আইসক্রিম প্রস্তুতকারীদের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ঈগলু, পোলার, বেল্লাসিমো ইত্যাদি।
ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস
আলু দিয়ে তৈরি মোহনীয় স্বাদের ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ফাস্ট ফুডপ্রেমীদের প্রথম পছন্দ। সর্বপ্রথম কে বা কারা এই সোনালি অমৃত আবিস্কার করেছেন তা এখনো আমাদের অজানা। তবে বিভিন্ন জনমত থেকে ধারণা করা হয়, এর উৎপত্তি খুব সম্ভবত বেলজিয়াম বা ফ্রান্সে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এর উৎপত্তিস্থল নিয়ে এত মতামত রয়েছে যে, সঠিক বলা যায় না কোথায় এর আসল জন্মস্থান! নামানুসারে ধারণা করা হয় হয়তো ফ্রান্সে উৎপত্তি বলেই নাম হয়েছে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। কিন্তু ইতিহাসও কি তাই বলে? চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের ইতিহাস। ১৭ শতকে বা ১৮ শতকের শেষে বেলজিয়ানরা আলুকে চিকন করে কেটে তেলে ভাজা শুরু করে। এই এলাকায় মানুষ পাতলা করে কাটা মাছ ভেজে খেতে পছন্দ করতো এবং তার সাথে মিল রেখেই আলু চিকন করে কেটে ভেজে খাওয়া শুরু হয়। একটা সময় যখন নদী শুকিয়ে গিয়ে মাছ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়লো তখন তারা মাছের বদলে এভাবে আলু খাওয়া শুরু করে কারণ মাছ ধরার চেয়ে আলু চাষ করা সহজ এবং সস্তা।
যাই হোক, বর্তমানে সব ফাস্টফুড, কুইক সার্ভিস, ফাইন ডাইনিং রেস্টুরেন্ট সহ পাব এবং বারের সম্ভবত সর্বাধিক বিক্রিত এ্যপেটাইজার বা সাইড ডিস্ হল এই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। অনেক রেস্তোরায় স্টেক এবং ফিস ফ্রাইয়ের সাথে একটু মোটা করে কাটা আলু ভাজা পরিবেশিত হয়। সুস্বাদু ১০ ধরনের ফ্রেঞ্চ ফ্রাইসের কথা না বললেই নয়, এগুলো হল পটেটো ওয়েজেস, ওয়াফেল ফ্রাইস, সুইট পটেটো ফ্রাইস, ক্রিনকেল কাট ফ্রাইস , স্টেক ফ্রাইস, স্ট্যান্ডার্ড ফ্রাইস, বেলজিয়ান ফ্রাইস, শুস্ট্রিং ফ্রাইস, কার্লি ফ্রাইস এবং গার্লিক ফ্রাইস।
এখন জেনে নেয়া যাক বিশ্বের সর্ববৃহৎ ফ্রোজেন ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস প্রস্তুতকারক কোম্পানি গুলোর নাম। বিশ্বের ৫ টি সর্ববৃহৎ ফ্রোজেন ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস প্রস্তুতকারক কোম্পানি গুলোর মধ্যে অন্যতম ম্যাককেইন ফুডস লিমিটেড, ল্যাম্ব ওয়েস্টন, জে আর সিম্পলট, আভিকো এবং ফার্ম ফ্রিটস ইন্টারন্যাশনাল। মূলত বিশ্বের সব নামিদামি রেস্টুরেন্ট গুলো এই কোম্পানির গুলোর কাছ থেকেই বিভিন্ন ধরনের ফ্রোজেন ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস সংগ্রহ করে থাকে। বাংলাদেশে ব্যবসারত আন্তর্জাতিক রেস্টুরেন্ট চেইন গুলো আমেরিকান জায়ান্ট ল্যাম্ব ওয়েস্টন এবং ম্যাককেইনের দেশীয় সরবরাহকারীদের কাছ থেকে ফ্রোজেন ফ্রাইস সংগ্রহ করেন।
স্টেক
স্টেক হল মাংসের অংশ বিশেষ যা সাধারণত হাড় এবং পেশী তন্তু সহ কাটা হয়। ব্যতিক্রম, যার মধ্যে মাংসের তন্তু বা ফাইবার সমান্তরাল ভাবে কাটা হয়, যেমন প্লেট থেকে স্কার্ট স্টেক কাটা হয়, পেটের পেশীগুলি থেকে কাটা হয় ফ্ল্যাঙ্ক স্টেক এবং সিলভারফিংজার স্টেক Loin থেকে কাটা হয় এবং তিনটি পাঁজরের হাড় অন্তর্ভুক্ত থাকে। স্টেক সাধারণত গ্রিলড হয়, তবে প্যান ফ্রাইডও হতে পারে। স্টেক খোলা আগুনে জলন্ত কয়লার উপরে গ্রিল করলে সবচেয়ে ভালো ফ্লেভার সম্বৃদ্ধ হয়। বিভিন্ন রেস্তোরায় বর্তমানে কম্বি ওভেনেও স্টেক রোস্ট করা হয় । গরু, বাইসন, উট, ছাগল, ঘোড়া, ক্যাঙ্গারু, ভেড়া, উটপাখি, শুকর, টার্কি এবং হরিণের মাংস থেকে স্টেক প্রস্তুত করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন ধরণের মাছ থেকেও স্টেক প্রস্তুত করা হয়, বিশেষত স্যামন, টুনা ফিশ এবং বড় পেলাজিক মাছ যেমন সোর্ড ফিশ, হাঙ্গর এবং মার্লিন। রেয়ার, মিডিয়াম রেয়ার, মিডিয়াম এবং ওয়েলডান এই চার পর্যায়ে স্টেক গ্রিল অথবা রোস্ট করা হয় ভোক্তার চাহিদানুযায়ী।
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্টেক গুলোর মধ্যে অন্যতম বিফ টেন্ডারলয়েন, রিব আই স্টেক, টি-বোন স্টেক, পোর্টার হাউজ, নিউ ইয়র্ক স্ট্রিপ, ভিল রিব আই স্টেক, সিরলয়েন স্টেক, পর্ক রিব, পর্ক চপ, ল্যাম্ব চপ, স্যামন ফিলে, টমাহক, ফ্লানক স্টেক ইত্যাদি। আর্জেন্টিনা, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ান, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র সমগ্র বিশ্বে স্টেকের সর্ববৃহৎ উৎপাদক দেশ। পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ৫ ধরনের স্টেক গুলো হল জাপানের A5 কোবে স্ট্রিপ স্টেক (৩৫০ ইউরো), ফুল ব্লাড ওয়্যাগু টেন্ডারলয়েন (২৯৫ ডলার), চারব্রয়েলড কোবে ফিলে (২৫৮ ডলার), সিলেক্ট কোবে ফিলে (২৪৬ ডলার) এবং ওয়্যাগু সিরলয়েন স্টেক (১৬৯ ডলার)। বিশ্বের ১০ টি বিখ্যাত স্টেক হাউজ গুলো হল পারাদোর ল্য হুয়্যে (উরুগুয়ে), শানাহানস্ অন দ্য গ্রীন (আয়ারল্যান্ড), ল্যা ম্যেইসন ল’অবরাক (ফ্রান্স), ল্যা কাবরেরা (আর্জেন্টিনা), আরাগাওয়া (জাপান), টেম্পলো দ্য কার্নে মার্কোস বাসসি (ব্রাজিল), হক্সমুর (ইংল্যান্ড), বিফ স্টেক কাওয়ামুরা (জাপান), দ্য বিফ ক্লাব (ফ্রান্সে) এবং পোরটেনো (অস্ট্রেলিয়া)।
সুশি
জাপানের বিখ্যাত খাবার সুশি তৈরি করা হয় ভিনেগার মিশ্রিত ভাত (সুশি মেশি), সাধারণত কিছুটা চিনি এবং লবণ দিয়ে বিভিন্ন ধরণের উপাদান (ネ タ, নেট) দিয়ে থাকে ), যেমন সামুদ্রিক মাছ, সী উইড, সবজি এবং মাঝে মাঝে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল। সুশির স্টাইল এবং এর উপস্থাপনা বিভিন্ন ধরনের হয়, তবে একটি মূল উপাদান হল “সুশি রাইস”, যাকে শারি (し ゃ り) বা সুমেশি (酢 飯) হিসাবেও উল্লেখ করা হয়।
সুশি ঐতিহ্যগত ভাবে মাঝারি শস্যের সাদা ভাত দিয়ে তৈরি করা হয়, যদিও এটি বাদামি চাল বা ছোট চাল দিয়ে তৈরি করা যায়। সুশি প্রায়শই সামুদ্রিক খাবারের দিয়ে প্রস্তুত হয় যেমন স্কুইড, ঈল ফিস, ইয়েলো টেইল টুনা, স্যামন, টুনা বা কাঁকড়া। অনেক প্রকারের নিরামিষ সুশিও ভোজন রসিকদের মাঝে জনপ্রিয়। এটি প্রায়শই আচারযুক্ত আদা (গারি), ওয়াসাবি এবং সয়া সসের সাথে পরিবেশন করা হয়। ডাইকন মুলা বা আচারযুক্ত ডাইকন (টাকুয়ান) সুশির জনপ্রিয় গার্নিশ।
বিভিন্ন প্রকারের সুশির মধ্যে অন্যতম মাকি, ট্যেমাকি, উরামাকি, নিগিরি এবং উপকরন ভেদে আহি নিগিরি (টুনা), ইবি নিগিরি (চিংড়ী), সাকে (স্যামন নিগিরি), উনাগি সুশি (ঈল), হামাচি সুশি (ইয়েলো ফিন টুনা), ইকা সুশি (স্কুইড) ইত্যাদি প্রকারের সুশি অত্যন্ত জনপ্রিয়।
টাকো
মেক্সিকোর জনপ্রিয় খাবারের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে টাকো নামের মজাদার এই খাবারটি। টাকো বানাতে ব্যবহৃত হয় টরটিয়া নামের বিশেষ এক ধরনের রুটি, যা প্রধানত কর্ন ফ্লাওয়ার এবং গমের আটা থেকে প্রস্তুত করা হয়। বিভিন্ন ধরনের সব্জি, মাংস, মাছ, চিজ ও সস্ দিয়ে টাকোর ফিলিং তৈরি করা হয় এবং চারপাশ দিয়ে মুড়ে, হাত দিয়ে খাওয়া হয় টাকো। টাকো সাথে বিভিন্ন উপকরণ যেমন সালসা, গুয়াকামোল, টক ক্রিম এবং সবজি যেমন লেটুস, পেঁয়াজ, টমেটো এবং চিলি পরিবেশিত হয় ।
টাকোস আন্তোহিতো বা মেক্সিকান স্ট্রিট ফুডের একটি সাধারণ রূপ, যা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। স্প্যানিশ ঔপনিবেশ শুরুর আগে থেকেই মেক্সিকোতে টাকো খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের প্রমান পাওয়া যায়।
বিভিন্ন প্রকারের টাকোর মধ্যে অন্যতম টাকোস এল পাস্তোর, টাকোস ডি আসাদোর, টাকোস ডি কাবেজা, টাকোস ডি কামারনেস, টাকোস ডি ল্যেগুনা, টাকোস ডি প্যেসকাদো, টাকোস দোরাদোস ও টাকোস স্যুডাদোস। টাকোর আরো কিছু প্রকারে মধ্যে প্রচলিত আছে হার্ড শেল টাকোস, সফট শেল টাকোস, ব্রেকফাস্ট টাকোস, ইন্ডিয়ান টাকোস এবং টাকোদিল্লা।
বিশ্বে নামকরা টাকো চেইন রেস্টুরেন্ট গুলোর মধ্যে অন্যতম টাকো বেল, টাকো জোন’স, জ্যাক ইন দ্য বক্স, বাহা ফ্রেস মেক্সিকান গ্রিল, মি কোকিনা, অন দ্য বর্ডার মেক্সিকান গ্রিল এ্যান্ড ক্যান্টিনা, কুদোবা মেক্সিকান ইটস্ এবং চিপোলোটে মেক্সিকান গ্রিল।
বিশ্বের সবচেয়ে দামী টাকোর স্বাদ গ্রহন করতে আপনাকে যেতে হবে মেক্সিকোর গ্র্যান্ড ভেলাস লস কাবোস রিসোর্টে এবং পাক্কা ২৫০০০ ডলার গুনতে হবে। টাকোটি গোল্ড ইনফিউজড টরটিয়া দিয়ে বানানো এবং ফিলিং হিসেবে জাপানিজ কোবে বিফ, লবস্টার, ব্ল্যাক ট্রাফেল, অতি উচ্চ মূল্যের ব্যেলুগা ক্যাভিয়ার এবং আরও এক স্তর গোল্ড। টাকোসটি পরিবেশিত হয় ১৫০০০০ ডলার মূল্যের প্লাটিনাম ও হোয়াইট গোল্ড দিয়ে তৈরি বোতলে টাকিলা লেই ৯২৫ নামের মদ। আপনাকে সর্বমোট ১৭৫০০০ ডলার বিল গুনতে হবে, বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১ কোটি ৪৮ লাখ ৭৫ হাজার!
![]() |
বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার |