Harvard School of Public Health-এর গবেষকদের করা এক স্টাডিতে দেখা গেছে, অলিভ অয়েলে উপস্থিত প্রায় ৪০ ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নানা ভাবে 'এল ডি এল' বা খারাপ কোলেস্টেলের মাত্রা কমায়, সেই সঙ্গে উপকারী কোলেস্টেরলের চাহিদা মেটাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। ফলে হার্টের কোনও ধরনের বড় ক্ষতির আশঙ্কা আর থাকে না। তবে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পাশাপাশি অলিভ অয়েলে (Olive Oil) উপস্থিত মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডও এক্ষেত্রে নানা ভাবে সাহায্য করে থাকে।
আমাদের দেশের যুবসমাজের একটা বড় অংশই আজ ডিপ্রেশন, নয়তো স্ট্রেস-অ্যাংজাইটির শিকার, যে কারণে আত্মহত্যার সংখ্যা যেমন লাফিয়ে-লাফিয়ে বাড়ছে, তেমনই স্ট্রেসের লেজুড় হয়ে আসা নানা ছোট-বড় রোগে আক্রান্তও হচ্ছেন অনেকে। তাই সময় থাকতে থাকতেই স্ট্রেস এবং ডিপ্রেশনের মতো সমস্যাকে বাগে আনতে হবে, না হলেই বিপদ! কিন্তু প্রশ্ন হল এমনটা করবেন কীভাবে? এক্ষেত্রেও ভরসা রাখতে পারেন অলিভ অয়েলের উপর। কারণ, অলিভ অয়েল খাওয়ামাত্র শরীরে serotonin নামে এক প্রকার 'ফিল গুড' হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যে কারণে ডিপ্রেশনের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না।
গত কয়েক বছরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে সারা বিশ্বের মধ্যে আমাদের দেশ ডায়াবেটিস ক্যাপিটালে পরিণত হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই সংখ্যাটা বছর বছর বাড়ছে। তাই এখন থেকেই সাবধান না হলে কিন্তু বিপদ! কিন্তু প্রশ্ন হল, ডায়াবেটিসের মতো রোগকে কি আদৌ দূরে রাখা সম্ভব? আলবাত সম্ভব! কীভাবে? প্রায় দিনই এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল (Olive Oil) খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন, ডায়াবেটিসের মতো রোগ ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারবে না। কারণ, এই তেলে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা ইনসুলিনের কর্মক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে, যে কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে।
বাঙালি চিরকালই একটু পেটরোগা। আর কেন হবে না-ই বা বলুন! কব্জি ডুবিয়ে খাওয়ার ব্যাপারে যে বাঙালিকে কেউ হারাতে পারবে না। ফলে গ্যাস-অম্বলের সমস্যা যেমন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী, তেমনই লেজুড় হয় বদহজমের মতো সমস্যাও। তাই তো বেশি করে অলিভ আয়েল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাতে কী হবে? অলিভ অয়েলে উপস্থিত Monosaturated Fat-এর কারণে Bowel Movement-এর উন্নতি ঘটে। ফলে গ্যাস-অম্বল এবং বদহজমের মতো সমস্যা তো দূরে পালায়ই, সেই সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো রোগের প্রকোপ কমতেও সময় লাগে না। এত সব উপকার পেতে নিয়মিত এক চামচ অলিভ অয়েলের সঙ্গে সম পরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন, উপকার পাবেই পাবেন!
উপকারী ফ্যাট এবং নানা ভিটামিন-মিনারেলের পাশাপাশি অলিভ অয়েলে মজুত রয়েছে প্রায় চল্লিশ ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রক্তে মিশে থাকা টক্সিক উপাদানদের ধ্বংস করে দেয়। ফলে খাতায় কলমে বয়স বাড়লের তার কোনও ছাপ শরীরের উপর পড়ে না। আর যদি অলিভ অয়েলের সঙ্গে নানা প্রাকৃতিক উপাদান মিশিয়ে তৈরি ফেস প্যাক মুখে লাগাতে শুরু করেন, তা হলে ত্বকের বয়স কমতেও দেখবেন সময় লাগবে না। সঙ্গে ত্বকের সৌন্দর্যও বাড়বে।
২০১৮ সালে Internation Journal of Molecular Sciences-এ প্রকাশিত একটি স্টাডি অনুসারে অলিভ অয়েলে উপস্থিত Polyphenols নামক উপাদানটি কোষের ক্ষমতা বাড়ায়। সেই সঙ্গে Arterial Wall-এর ইলাস্টিসিটিও বাড়ে, যে কারণে নানা ধরনের হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বেশ কয়েক বছর আগে The Lancet পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুসারে ১৯৯০-২০১৬ সালের মধ্যে এদেশে হার্টের রোগে আক্রান্তের সংখ্যাটা প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বুঝতেই পারছেন, এমন পরিস্থিতিতে হার্টকে চাঙ্গা রাখতে হলে অলিভ অয়েলের উপর ভরসা না করে কোনও উপায় নেই।
- ক্যান্সার রোগকে দূরে রাখে :: গত বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশ করা এক রিপোর্ট অনুসারে গত কয়েক বছরে আমাদের দেশের বেশির ভাগ নাগরিকই হয় হার্টের রোগ, নয়তো ক্যান্সারের কারণে মারা গেছেন। শুধু তাই নয়, আগামী দিনে এদেশে ক্যান্সার রোগে আক্রান্তের সংখ্যাটা যে আর বাড়বে, সে বিষয়ে এক প্রকার নিশ্চিত বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রকোপ বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাই তো এমন পরিস্থিতিতে আট থেকে আশি, সকলেরই নিয়ম করে আলিভ আয়েল খাওয়া উচিত। কারণ, এই তেলটিতে মজুত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের ধ্বংস করার মধ্যে দিয়ে Oxidative Damage আটকায়, সেই সঙ্গে ক্যান্সার সেলগুলিকেও ধ্বংস করে দেয়। ফলে এমন মারণ রোগ ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারে না।
অলিভ অয়েলে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটও মজুত থাকে, যা রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। তাই যাঁদের পরিবারে এমন রোগের ইতিহাস রয়েছে, তাঁরা মাঝে মধ্যেই অলিভ অয়েল দিয়ে তৈরি নানা খাবার খেতে ভুলবেন না যেন! ইচ্ছা হলে কাঁচা অলিভ অয়েলও খেতে পারেন।
এক্কেবারে ঠিক শুনেছেন! ব্রেন পাওয়ার বাড়াতে বাস্তবিকই অলিভ অয়েলের জুড়ি মেলা ভার। এতে উপস্থিত ওমেগা ৩ এবং ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অ্যালঝাইমার্সের মতো মস্তিষ্কের রোগকে দূরে রাখতেও অলিভ অয়েল বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে অলিভ অয়েলে (Olive Oil) উপস্থিত নানা উপাদান ব্রেন সেলে তৈরি হওয়া Beta-Amyloid Plaque দূর করে, যে কারণে এমন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না।
চটজলদি ওজন কমাতে চান তো অলিভ অয়েল খেতে ভুলবেন না যেন! Harvard School of Public Health-এর গবেষকদের করা একটা স্টাডিতে একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে অলিভ অয়েল নানা ভাবে সাহায্য করে থাকে। তাই পুজোর আগে ওজন কমাতে চোখ বন্ধ করে অলিভ অয়েলের উপর ভরসা রাখতে পারেন। অলিভ ওয়েল কীভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে? বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তেলে উপস্থিত Monounsaturated Fat এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
শরীরে প্রদাহের মাত্রা বাড়তে শুরু করলে হার্টের যেমন মারাত্মক ক্ষতি হয়, তেমনই ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, অ্যালঝাইমার্স এবং আর্থ্রাইটিস মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ে। তাই তো প্রদাহের মাত্রা যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। কিন্তু এই কাজটা করবেন কীভাবে, তা জানেন কি? এক্ষেত্রেও অলিভ অয়েল (Health Benefits of Olive Oil) আপনাকে সাহায্যে করতে পারে। কীভাবে? এই তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা অল্প সময়েই প্রদাহের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। ফলে শরীরের কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না।
মুখ ধোয়ার পর অবশ্যই ত্বকের আর্দ্রতা নিশ্চিত করুন। ময়েশ্চারাইজার কিংবা ময়েশ্চারাইজিং নাইট ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। ত্বক তৈলাক্ত প্রকৃতির না হলে এসবের পরিবর্তে অলিভ অয়েলও ব্যবহার করতে পারেন। সমপরিমাণ অলিভ অয়েল ও পানি একসঙ্গে নিয়ে আঙুলের সাহায্যে ভালোভাবে মিশিয়ে এরপর মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে নিন। ময়েশ্চারাইজার হিসেবে যে সামগ্রীই ব্যবহার করুন না কেন, তা ভালোভাবে পুরো মুখে ম্যাসাজ করে ঘুমান। সকালে পাবেন প্রাণবন্ত ত্বক।
যাঁরা সারা দিন নিজের যত্ন নেওয়ার সময় পান না, তাঁরা অবশ্য তেল দিয়ে মুখের ত্বক পরিষ্কার করার পর সপ্তাহে ১-২ দিন ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন। পাকা কলা, পাকা পেঁপে ও ময়দা একসঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন ১০-১৫ মিনিট। এরপর কুসুম গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন।