ঐতিহাসিক নাম:পোর্টো গ্র্যান্ডে এবং ইসলামাবাদ।বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। বন্দরনগরী নামে পরিচিত শহর, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত। বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত পাহাড়, সমুদ্রে এবং উপত্যকায় ঘেরা চট্টগ্রাম শহর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যে প্রাচ্যের রাণী হিসেবে বিখ্যাত। ঢাকার পর বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ শহর হচ্ছে চট্টগ্রাম।চট্টগ্রামের মানুষ ভোজন রসিক হিসেবে পরিচিত।
- কালাভুনা
চাঁটগাঁইয়া হালা ভুনো (কালাভুনা) গরু বা খাসির মাংস দিয়ে তৈরী চট্টগ্রামের একটি ঐতিহ্যবাহী মাংসের তরকারি যা বর্তমানে সমগ্র বাংলাদেশেই বিখ্যাত ও জনপ্রিয়। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কালাভুনা রান্না করতে প্রয়োজন হয় অনেক রকমের মসলা। হরেক রকম মসলার সংমিশ্রণে রান্না করার ফলে মাংস ভুনায় কালো রং আসে বলেই এর নাম দেওয়া হয়েছে কালাভুনা।মেজবান ছাড়াও বিয়ে, ঈদ বা রমজানে সাহরি বা ইফতারেও কালাভুনা একটি পছন্দের খাবারে পরিণত হয়েছে। সাধারণত ভাত, পরোটা, নান রুটি কিংবা রুটির সাথে কালাভুনা খাওয়া হয়।
- মধুভাত
একধরনের শীতকালীন মিষ্টান্ন খাবার যা চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবারের একটি। মূলত চাল, নারকেল, দুধ এবং চিনির সমন্বয়ে এটি তৈরি করা হয়। মধুভাতের প্রধান বৈশিষ্ঠ হল এই ভাত রাতে রান্না করে, পরদিন সকালে পরিবেশন করা হয় এবং খেতে হয় খালি পেটে। আরেকটি বিশেষত্ব হল এই শর্করা জাতীয় খাবার দীর্ঘক্ষণ ঢেকে রাখার ফলে গাঁজন পক্রিয়ার এতে কিছুটা অ্যালকোহল উৎপাদিত হয়, ফলে মধুভাত খাবার পর ঝিমুনি আসে। এই কারণে চট্টগ্রামে এর জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে ছয় থেকে আট ঘণ্টা বা অধিক সময় ধরে গাঁজন পক্রিয়ার রাখা হলে এতে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয় যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
- তালবরা
তাল অতি পরিচিত এবং গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ফল।
কিন্তু তাল সবসময় পাওয়া যায় না। বছরে সাধারণত শ্রাবন থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত কম বেশি তাল পাওয়া যায়। ভাদ্র মাসে এই তাল পাকে। আর এই তালকে কাচা ও পাকা দুভাবে খাওয়া যায়। কাচা তালের থেকে পাকা তালের ব্যবহার অনেক বেশি। গ্রাম বাংলার মানুষের মধ্যে কেউ কেউ পাকা তাল দিয়ে ভাত খায় আবার কেউ কেউ নানান ধরনের পিঠা তৈরী করে।
যেমন: তালবরা, তালপুলি, তালের ভাপা, তালবরক পিঠা, তালগরগড়িয়া পিঠা ইত্যাদি।
তবে পাকা তালের রস জ্বাল দিয়ে ঘন করে ভাতের সাথে খেয়ে থাকেন অনেকে। এর সঙ্গে নারকেল, দুধ, চিনি, কলা ইত্যাদি মিশিয়ে আরও নানান স্বাদের খাবার তৈরি করেন।
তালের ঘন রসে সঙ্গে ডিম, চালের গুঁড়া, চিনি এবং নারিকেল দিয়ে তালের বিভিন্ন ধরনের পিঠা বা তালের বড়া তৈরি করা হয়। গ্রামগঞ্জে এই পিঠার ঐতিহ্য রয়েছে।তালের রস যখন জ্বাল দেওয়া হয় তখন তালের মিষ্টি সুভাষ ছড়িয়ে পড়ত গ্রামে।
সব তাল মিষ্টি এবং সুগন্ধযুক্ত হয়না, তালের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে কিছু কিছু তাল অনেক ঘ্রাণ এবং মিষ্টি হয় কিছু কিছু তাল আবার পানসে হয়।
তাল থেকে রস বের করা তারপর পিঠা বানানো এটা একটি কষ্টসাধ্য কাজ তাই অনেকেই তালের পিঠা বানাতে চান না কষ্টের কারণে এখন আমাদের দেশে এই তালের পিঠা বিলুপ্তির পথে।
- মেজবানি মাংস
গরুর মাংস সবখানে রান্না হলেও চট্টগ্রামে এর ধরন একটু আলাদা। মসলাও ভিন্ন। শুধু তা-ই নয়, রান্নার পাতিল থেকে শুরু করে চুলা পর্যন্ত সব আলাদা থাকে। সামাজিক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দেওয়া মেজবানে বিশেষ পদ্ধতিতে বাবুর্চিরা এই মাংস রান্না করেন বলে এর নাম হয়েছে মেজবানি মাংস। মাংস রান্নার আলাদা পদ্ধতির কারণেই মেজবানি মাংসের স্বাদ আলাদা। পরিচিতি বিশ্বজুড়ে। এক কালে বাড়ির উঠোনের আয়োজন মেজবানি মাংস এখন শুধু বিয়ে, আকিকা, মৃত্যুবার্ষিকী কিংবা রাজনৈতিক আয়োজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। মেজবানি মাংস চলে এসেছে পাঁচ তারকা হোটেল থেকে শুরু করে নামী-দামি সব রেস্টুরেন্টে।
- আখনি বিরিয়ানি
চট্টগ্রাম সহ পুরো বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী একটি খাবারের নাম।সাধারণত গরু বা খাসির মাংস দিয়েই রান্না করা হয় এই খাবারটি, তবে মুরগির আখনি বিরিয়ানিও কিন্তু অত্যন্ত মজাদার একটি খাবার।
- শুঁটকি মাছ
শীতকালীন সবজির সঙ্গে ছুরি শুঁটকি, তেল-পেঁয়াজ-মশলা দিয়ে লইট্টা শুঁটকি এবং মরিচ-পেঁয়াজ-সরিষা মেখে ঝাল ঝাল চিংড়ি শুঁটকির ভর্তার কথা বলতেই জিভে জল আসে না এমন ‘চাঁটগাইয়া’ খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাই তো ‘গরিবের খাবার’ শুঁটকি এখন জায়গা করে নিয়েছে বিত্তশালীদের ডাইনিং টেবিল, বিয়ের খাবারের মেন্যুতে। অনন্য স্বাদের কারণে শুঁটকি জনপ্রিয়তা পেয়েছে দেশে-বিদেশে। দাম এবং চাহিদাও বেড়েছে কয়েকগুণ।
শুঁটকি ব্যবসায়ী আবদুল করিম বাংলানিউজকে জানান, রুপচাঁদা, লইট্টা, ছুরি, ছোট চিংড়ি, পুঁটি, কাঁচকিসহ ১৭ রকমের মাছের শুঁটকি হয়। তবে ছুরি, লইট্টা এবং চিংড়ি শুঁটকির কদর বেশি। জেলেরা সমুদ্র থেকে মাছ ধরে আনার পর তা রশিতে ঝুলিয়ে কিংবা মাদুরে বিছিয়ে রোদে শুকাতে দেন। বিশেষ প্রক্রিয়ায় রোদে শুকিয়েই রাসায়নিক ছাড়া শুঁটকি তৈরি হয়।
তিনি বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রামের কক্সবাজার, সোনাদিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সেন্টমার্টিন দ্বীপসহ বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী এলাকায় শুকনো মৌসুমে সামুদ্রিক মাছের শুঁটকি করা হয় বেশি। দেশের একমাত্র শুঁটকির আড়ত চট্টগ্রামের আছাদগঞ্জে প্রতি শনিবার বসে শুঁটকির বড় বাজার। এখান থেকেই ব্যবসায়ীরা শুঁটকি কিনে সারাদেশে বিক্রি করেন। রফতানি করেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
- দুরুস
চামড়া ছাড়ানো আস্ত মুরগী ঘন ঝোল দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে রান্না করাকেই চট্টগ্রামের ভাষায় ‘দুরুস কুরা’ বলে। ঝোলের স্বাদ এবং ঘ্রাণের কারণেই দুরুস মুরগী অন্য আইটেমের চেয়ে আলাদা।
জামাই আদর, অতিথি আপ্যায়ন, বিশেষ মেহমানদারিতে চট্টগ্রামে মুরগীর দুরুসের কদর আছে বেশ। অতিথিদের প্রতি সম্মান জানাতে আস্ত মুরগী দিয়ে দুরুস রান্নার প্রথা এই অঞ্চলে চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে।
- মহেশখালীর পান
চুন, সুপারি, মশলা দিয়ে মহেশখালীর পান মুখে পুরে দিতেই মিষ্টিতে ভরে যায় পুরো মুখ। সিনেমা কিংবা গানে- মহেশখালীর পানের কথা আছে সবখানে। বড় আকার এবং মিষ্টি স্বাদের কারণেই দেশ-বিদেশে খ্যাতি পেয়েছে বৃহত্তর চট্টগ্রামের মহেশখালীর এই পান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, মহেশখালীর প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে মিষ্টি পান চাষ হয়। এখানে পানের বরজ সাধারণত দুই ধরনের- পাহাড়ি বরজ এবং বিল বরজ। সব মিলিয়ে প্রায় ১৩ হাজার বরজে পান চাষ হয় মহেশখালীতে।কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ছাড়াও ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও ঢাকায় মহেশখালীর পান সরবরাহ হয়। সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, হংকং, থাইল্যান্ড, আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশেও রফতানি হয় মহেশখালীর মিষ্টি পান।
- আফলাতুন হালুয়া মিষ্টির দোকানে কাগজে মোড়ানো এক প্রকার মিষ্টির নাম আফলাতুন। মুখরোচক এই মিষ্টির স্বাদ অতুলনীয়।শেফ জাহেদ এর বিস্তারিত খুঁজে পাননি।
- বেলা বিস্কুট
প্রায় শত বছর আগে চট্টগ্রামের একটি বেকারিতেই প্রথম বানানো হয় বেলা বিস্কুট। মচমচে, সুস্বাদু এবং ডাউস সাইজের কারণে অল্পদিনেই জনপ্রিয়তা পায় এই বিস্কুট। চায়ের দোকান থেকে ধনাঢ্যদের ডাইনিং টেবিল- জায়গা করে নেয় সবখানে। ময়দা, ডালডা, গুঁড়ো দুধ, চিনি, লবণ ও তেল মিশিয়ে তৈরি করা হয় খামির। সঙ্গে দেওয়া হয় বিশেষ ধরনের মাওয়া। মাটির তন্দুরে একদিন রাখার পর প্রথম দফায় দেড়-দুই ঘণ্টা সেঁকা হয়। দ্বিতীয় দফায় আরেকবার সেঁকে তৈরি করা হয় বেলা বিস্কুট। প্রতি পিস বিক্রি হয় সোয়া দুই টাকায়। চায়ের সঙ্গে খেতে গণি বেকারির বেলা বিস্কুট শুধু দেশে নয়, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশেও রফতানি হয়।
#চট্টগ্রামেরখাবার #চট্টগ্রামকুইজিন #CuisineOfChittagong